বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৭ এপ্রিল ওই গৃহবধূকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত গৃহবধূ আলফা শাহরিন (২৬) চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হাদু মাঝি পাড়া এলাকার মো. জাহেদুল মোস্তফার (৩৪) স্ত্রী এবং বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী বাজারের নজিরাবাদ দারোগা বাড়ির নুরুল করিমের মেয়ে।
এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর পিতা নুরুল করিম ৬ মে বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের নামে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ পিটিশন মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন- মৃত আলফা শাহরিনের শ্বাশুড়ি বিবি আয়েশা (৪৮), ননদ আশফিকা (১৯) এবং দেবর সামির (২১)।
চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা মামলাটি এফআইআর হিসেবে আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্টোকে তদন্তভার দিয়ে প্রতিবেদন দিতে মামলাটি হস্তান্তর করতে পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ১৭ জুন পারিবারিকভাবে মো. জাহেদুল মোস্তফার সাথে আলফা শাহরিনের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ২ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে জাহেদুল তার স্ত্রীকে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিত। সংসারে সুখের আশায় বিভিন্নজনের কাছ থেকে ওই গৃহবধূ ৯ লক্ষ ২১ হাজার টাকা এনে দেয়। কিন্তু তাতেও যৌতুকের লোভ থেকে বিরত না থেকে স্বামী জাহেদুল মোস্তফা তার স্ত্রী আলফা শাহরিনকে টাকার জন্য কঠোর নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে জাহেদুল মোস্তফা টাকা আত্মসাতের অপরাধে চলতি বছরে ৯ এপ্রিল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে থাকে। জাহেদুল মোস্তফা পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য শাহরিনের বাবা থেকে ২০ লক্ষ এনে দেওয়ার জন্য নানা ধরনের নির্যাতন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শাহরিনের শ্বাশুড়ি ফোন করে তার বাবাকে বলে যে, তার মেয়ে রিক্সার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লেগেছে। শাহরিনের বাবা তার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখেন, মেয়ে তার রুমে বিছানায় পড়ে আছে। শাহরিনকে তার বাবা চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে ননদ ও দেবর বাধা দিয়ে জোর করে বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এন্ড ডেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। শাহরিনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
চমেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিনের গলায় দাগ ও অচেতন অবস্থায় মুখ থেকে প্রচণ্ড বমি এবং বমি সদৃশ ফেনা বের হতে থাকার কারণ জানতে চাওয়ায় তার শ্বাশুড়ি রিক্সার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লেগেছে বলে জানায়। শাহরিনের অবস্থা গুরুতর হলে চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে নিতে হবে বলে জানায়। কিন্তু আইসিইউ স্বল্পতায় ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিনকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় কৌশলে শাহরিনের শ্বাশুড়ি, ননদ ও দেবর পালিয়ে যায়।
পরে মৃত শাহরিনকে তার বাবার বাড়িতে দাফন করতে নিয়ে গেলে গোসল করানোর সময় গোসল কাজে নিয়োজিত প্রতিবেশী ইয়াসমিন আক্তার জানায়, শাহরিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের চিহ্ন রয়েছে। এতে শাহরিনের বাবার মনে সন্দেহ হলে তার শ্বাশুড়িকে শাহরিনের শরীরে বিভিন্ন আঘাতে দাগ, মুখের বমি ও বমি সদৃশ ফেনাসহ মৃত্যুর কারণ শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, শাহরিন নিজেই নিজের গলায় ফাঁস দিয়েছে এবং পূর্বের বলা রিক্সায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগার বিষয়টি মিথ্যা বলে জানায় তিনি। পাশাপাশি শ্বাশুড়ি হুমকি দিয়ে বলেন, এ বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুরো পরিবারের ওপর ভয়ানক বিপদ নেমে আসবে এবং শিশু বাচ্চাকে কেড়ে নেবে বলে হুমকি-ধমকি প্রদান করেন। এ বিষয়ে মামলার বাদি নুরুল করিম পাঁচলাইশ থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নেওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বিএনএনিউজ/ বিএম/ এইচমুন্নী