বিএনএ ডেস্ক : পবিত্র শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত। বিশ্বের মুসলমানদের বিশ্বাস, এ রাতে অসংখ্য বান্দা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও আশীর্বাদ লাভ করে থাকে। এ কারণে এ রজনীকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘নিষ্কৃতি/মুক্তির রজনী’ বলা হয়। শবে বরাত : নফল নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া ইত্যাদি জানার পূর্বে আসুন জেনে নেই শবে বরাতের নফল নামাজ কত রাকাত।শবে বরাত (2023) এর নফল নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া জানার জন্য শেষ পর্যন্ত কষ্ট করে পড়ুন।
আমাদের শেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর হযরত মোহাম্মদ (সা.) এ রজনী সম্পর্কে বলেছেন, এই রাত্রিতে এবাদতকারীদের গুণাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন।
আরবি সাবান মাসের ১৫ তারিখে পালিত একটি পূণ্যময় রাত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানগণ বিভিন্ন কারণে এটি পালন করেন। একজন মুসলিম ব্যক্তির বিশ্বাস মতে বিশেষ এই রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভ করে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ করা যায়। তাই এ রাতকে আরবিতে লাইলাতুল বারাআত রাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বিশেষ এই ফজিলতপূর্ণ রাত্রিকে আমাদের প্রিয় নবী তার উম্মতদেরকে বেশি বেশি করে ইবাদত করার কথা বলেছেন।
প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর।
শবে বরাতের নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল
অন্যান্য সকল নামাজের মতই শবে বরাতের নামাজ তবে এ ছাড়াও শবে বরাতের জন্য বিশেষ কিছু নফল নামাজ রয়েছে এগুলো দুই রাকাত তহিয়াতুল অযুর নামায। তাহাজ্জুদের নামাজ, সালাতুত তসবির নামাজ ইত্যাদি এই নামাজগুলো শবে বরাতের রাতে আদায় করা উত্তম। মুসলিমদের মধ্যে কোনো কোনো গোষ্ঠী বিশ্বাস করেন শবে বরাত রাতে আল্লাহ্ সকল কিছুর ভাগ্য পুনর্বণ্টন করেন এবং বিশেষ এই রাতে মহান আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তাই সকল মুসলিম ব্যক্তির শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। শবে বরাতের নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল তা জানা গেল।
শবে বরাত : নফল নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া ইত্যাদি জানার পূর্বে আসুন জেনে নেই শবে বরাত এর নফল নামাজ কত রাকাত।
শবে বরাতের রাতে মাগরিব নামাজের পর দুই রাকাত তহিয়াতুল অজুর নামাজ, নিয়ম- প্রতি রাকাতে আলহামদুলিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ (সূরা এখলাছ)।
শবে বরাত : নফল নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবি
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
বাংলায় নিয়ত করলে এই ভাবে করতে পারেন: ‘শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর’।
শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ম
দুই রাকাত করে ১০/২০/৪০ রাকাত পড়া যায়।নফল নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে।
অনেকে ১২ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে, ১০ বার কালেমা তওহীদ, ১০ বার কলেমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ পড়েন।
কেউ কেউ পরামর্শ দেন-
দু’রাকাত নামাজ শেষ করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা এখলাছ ২১ বার তিলাওয়াত করবে।
শবে বরাতের নফল নামাজের 2023 দোয়া
শবে বরাতে গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের রাসূল (সাঃ) বলেন, “ আমার কাছে শাবান মাসের রোযা অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের কাছে শাবানের রাত ( শবে বরাত ) হাজির হবে, তখন তোমরা সেই রাত্রটি জাগ্রত থাকো (নামাজ পড়ে, কুরআন তেলোওয়াত করে, জিকির করে, দোয়া করে) এবং দিনের বেলা সাওম পালন কর। কারণ এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে এসে ঘোষণা করেন, আছে কি এমন কোনো বান্দা যে তার গুনাহ মাফের জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী, যে আমার কাছে রিজিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোনো বিপদগ্রস্ত, যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করব। এভাবে সারারাত আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দার উপর বৃষ্টির মত রহমত বর্ষিত হতে থাকে। ”(ইবনে মাযাহ,২য় খন্ড, হাদিস নং-১৩৮৮)
এছাড়া বুখারি ও মুসলিম শরীফে্র অনুরুপ হাদীস হতে পাওয়া যায়, “আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতের শেষের ভাগে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে হাজির হোন এবং বান্দাদের দোয়া কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন।”
শবে বরাতের 2023 দোয়া
উপরের হাদিসের প্রেক্ষিতে নিচের দোয়া সমূহ আমরা মোনাজাতে পাঠ করতে পারি।
শবে বরাতের নামাজ শেষে যে সব দোয়া পড়ুন, মোনাজাত করুন
০১. রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতার হামনা লা কুনান্না মিনাল খাসিরীন)। (হে আমাদের রব! আমরা আমাদের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্সমা না করেন এবং রহমত না দেন তা হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবো।
০২. রাব্বি আউজুবিকা মিন হামাযাতিশ শায়াতীন (শয়তানের প্ররোচনা হতে হে আল্লাহ তোমার নিকট আশ্রয় চাই)
০৩. আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাশ শাইত্বানীর রাজীম ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি ইয়াও মিদ্দীন (কিয়ামতের বিভৎসতা হতে), আল্লা হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিম মাওতিল ফুজাআতি (অতর্কিত মৃত্যু), ওয়া মিন লাদগিল হাইয়াতি(সর্পদংশন), ওয়া মিনাছ ছাবুয়ি (হিংস্র জন্তর আক্রমন), ওয়া মিনাল গারাক্কি(পানিতেডোবা) ওয়া মিনাল হারাক্কি (আগুনে পোড়া)।
০৪. ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, মসিহ দাজ্জালের অনিষ্ট হতে এবং জীবন মৃত্যুর ফেতনা হতে।’
০৫. ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই; কেননা আমি সাক্ষ্য দিই যে- তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমি এক অদ্বিতীয়। সকল কিছুই যার মুখাপেক্ষী। যিনি জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই।’
০৬. ‘হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিপদের কষ্ট, নিয়তির অমঙ্গল, দুর্ভাগ্যের স্পর্শ ও বিপদে শত্রুর উপহাস হতে।’
০৭.আল্লাহুম্মা আকফিনী বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা আম্মান সিওয়াকা।(হে আল্লাহ আমাকে হালাল পথে এ পরিমাণ রিযিক দাও যা আমার জন্য যথেষ্ট হয়, আর হারাম রোজগারের যাতে প্রয়োজন না হয় এবং স্বচ্ছল করে দাও তোমার অনুগ্রহ দ্বারা এমনভাবে যাতে তুমি ব্যাতীত অন্য কারো প্রতি নির্ভর করতে না হয়।
০৮. ‘হে আল্লাহ! আমি সকল বিরোধ, কপটতা-মুনাফেকি এবং বদ চরিত্র হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
০৯. ‘হে আল্লাহ! আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও ছোট গুনাহ, বড় গুনাহ, প্রকাশ্য ও গোপন গুনাহ, আগের গুনাহ, পরের গুনাহ।’
১০. ‘হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়েত করেছ, আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যাদেরকে নিরাপদ রেখেছ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত কর। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি আমাদেরকে যা দিয়েছ তাতে বরকত দাও। তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছ তা হতে আমাদেরকে রক্ষা করো। কারণ তুমিই তো ফয়সালা কর। তোমার ওপরে তো কেউ ফয়সালা করার নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, সে কোনো দিন অপমানিত হবে না এবং তুমি যার সাথে শত্রুতা করেছ, সে কখনো সম্মানিত হতে পাবে না। হে আমাদের রব! তুমি বরকতময় ও সুমহান।
১১. ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরে নূর প্রদান কর। আমার কর্ণে নূর দাও। আমার চোখে নূর দাও। আমার সম্মুখে নূর দাও। আমার পশ্চাতে নূর দাও। আমার ডানে নূর দাও। আমার বামে নূর দাও। আমার ওপরে নূর দাও। আমার নিচে নূর দাও। আর হে সৃষ্টিকুলের রব, আমার নূরকে তুমি প্রশস্ত করে দাও।
১২. হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! তোমার দীনের ওপর আমার অন্তরকে অবিচল রাখ।
১৩. রাব্বির হামহুমা কামা রাববা ইয়ানী ছাগগীরা
শবে বরাতে (২০২৩) রাতে ভুলে যাবেন না বিপদ মুক্তির নিচের দোয়া সমূহ পড়তে
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মাবূদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (মুসলিম-১/৪০৮)
বিপদ মুক্তির দোয়া
০১. উচ্চারণ: হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকীলু আলাল্লাহি তাওয়াক্কালনা।
অর্থ: আল্লাহই আমাদের যথেষ্ট। তিনিই উত্তম কার্য নির্বাহক এবং তাঁর উপরই আমাদের ভরসা ।
০২. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইয়াসসির লানা উমুরানা
অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের কাজগুলো সহজ করে দিন
শবে বরাত : নফল নামাজের সবশেষে দরুদ পড়ুন।
ক) আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া’ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ। আল্লা হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
খ) আল্লাহুম্মা সাল্লিা আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন্না বিয়্যিল উম্মিয়্যি।
হে আল্লাহ ! আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) যিনি সাধারণের ন্যায় শিক্ষা প্রাপ্ত নন, তাঁর ওপর রহমত অবতীর্ণ কর।
সতর্কতা: ফরজ নামাজ আবশ্যিক। নফল নামাজ আবশ্যিক নয়। শবে বরাতের নামাজ যেহেতু নফল সেহেতু নফল পড়তে পড়তে ফরজ পড়া ভুলে গেলে বা ঘুমের কারণে পড়তে না পারলে কিন্তু সবই শেষ। অর্থাৎ নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না। এ রকম যাতে না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন :
মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। আমিন।
বিএনএনিউজ24/ বিএম, এসজিএন