বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মো. ফারহাদ হোসেন রুবেল (২৮) নামে এক হাজতি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে জেলার মো. রফিকুল ইসলামসহ এক ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী ভবনের ১৫ নম্বর সেলের দায়িত্বরত কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কারারক্ষী ইউনুস মিয়া সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। সহকারী প্রধান কারারক্ষী কামাল হায়দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
রোববার (৭ মার্চ) দুপুরে কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি প্রিজন) নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের উপ মহাকারাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) এ কে এম ফজলুল হক।
ফজলুল হক জানান, কারাগারের ভিতর থেকে হাজতি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কারাকর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যাদের বিরুদ্ধে অবহেলা অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন মো. ছগির মিয়াকে প্রধান করে একজন সিনিয়র জেল সুপার এবং একজন জেলারকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টর পর প্রয়োজনীয় আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে শনিবার (৬ মার্চ) ভোর থেকে হাজতি রুবেলের সন্ধান না মেলায় দিনভর তল্লাশি করে সন্ধ্যায় জিডির পর রাতে মামলা করেন প্রত্যাহার হওয়া জেলার রফিকুল ইসলাম। কোতোয়ালী থানার মামলা নম্বর ২৩/২১। ধারা-দণ্ডবিধির ২২৪।
মামলার এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার (৬ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে তালামুক্ত করার পর ফরহাদ হোসেন ওরফে রুবেল নামে এক হাজতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। যার হাজতি নম্বর ২৫৪৭/২১। তিনি গত ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়। আগের দিন শুক্রবার রাতে সবার সাথে রুবেলও কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকলেও ভোর সাড়ে ৬টার পর থেকে তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। পরে দায়িত্বরত কারারক্ষী ও হাজতিদের কাছ থেকে জানতে পারেন, হাজতি রুবেল শনিবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে পুরো কারাগারে তল্লাশি করেও তার হদিস মেলেনি।
মামলার বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, শনিবার (৬ মার্চ) রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। আমরা নিখোঁজ হাজতির সন্ধানে কাজ শুরু করেছি।
এর আগে শনিবার দিনভর কারা অভ্যন্তরে তল্লাশি করেও হদিস না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান কোতোয়ালী থানায় জিডি করেন। জিডি নম্বর-৪১৭।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অর্ন্তবর্তীকালীন হাজতের পরোয়ানা মোতাবেক গত ৯ ফেব্রুয়ারি রুবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়। শনিবার সকাল ৬টা থেকে কারা অভ্যন্তরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার সন্ধানে কারা অভ্যন্তরে তল্লাশি চলছে।
জানা যায়, এরআগে ২০১৮ সালে নরসিংদীর রায়পুরার ফরহাদ হোসেন রুবেল কারাগারে গেলে সেই সময় দুইবার কারাগারের ড্রেনে ও ছাদে আত্মগোপন করেন। সেই সময় ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর দুই বারই তাকে উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ। এবারও তিনি সেই কাজ করেছেন ধারণা করে কারা কর্মকর্তারা আশা করছেন, রাতের মধ্যেই কারাগারের ভেতর থেকে তার সন্ধান মিলবে।
রুবেল সদরঘাট থানার এসআরবি রেল গেইট এলাকায় ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে তুচ্ছ ঘটনায় আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে বুকে ছুরিকাঘাত করেন। পরদিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কালাম হাসপাতালে মারা যান। ৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে হত্যার অভিযোগে ডবলমুরিং থানার মিস্ত্রি পাড়া থেকে ফরহাদ হোসেন রুবেলকে গ্রেপ্তার করে সদরঘাট থানা পুলিশ। ওই মামলায় ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে যান রুবেল।
বিএনএনিউজ/মনির
আরো পড়ুন : চট্টগ্রাম কারাগার থেকে হাজতি নিখোঁজ!