23 C
আবহাওয়া
১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মিয়ানমারে আসছে মার্কিন সেনা?

মিয়ানমারে আসছে মার্কিন সেনা?

মিয়ানমারে আসছে মার্কিন সেনা

।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী ।।

বিএনএ, ঢাকা: ১৯৪৮ সালে বার্মা নামে বর্তমান মিয়ানমার যুক্তরাজ্যের স্বাধীনতা লাভ করে। তখন থেকে মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাত চলছে। ৭ দশকের বেশি সময় ধরে চলমান এই সংঘাত বিশ্বের দীর্ঘতম গৃহযুদ্ধ। সাম্প্রতিককালে এই গৃহযুদ্ধটি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে তা দেশটির অস্তিত্ব থাকবে নাকি টুকরো টুকরো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের এই জাতিগত সংঘাতে জাতিসংঘ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সামনে এসেছে। যদিও চীন এই ধরনের পদক্ষেপ মেনে নিবে না। কীভাবে মার্কিন সেনা মিয়ানমারে মোতায়েন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে ভূ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা?

৮৭ বছর আগে ১৯৩৫ সালে এ অঞ্চলের ঔপনিবেশিক শাসক ব্রিটিশরা ‘বার্মা অ্যাক্ট’ করেছিল, ভারত থেকে ওই অঞ্চলকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে। ১৯৩৭ সালে সেই আইন কার্যকর হয়। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘বার্মা অ্যাক্ট’ বলতে ব্যাপক সামরিক জবাবদিহির অধীনে এনে ‘মিয়ানমারকে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চায় বাইডেন প্রশাসন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ বিল পাস হয়।

ইতিহাসের এই দ্বিতীয় ‘বার্মা অ্যাক্ট’ অনুমোদন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেটে তার সংযুক্তির মূল রাজনৈতিক ফল কী হবে, সেটা অনেককে ভাবাচ্ছে এখন। যদিও মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ‘মানবিক সহায়তা’র মাধ্যমে যুক্ত হতে চায়। কিন্তু এ-ও প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে এবং বিলেও আছে, মিয়ানমারের ভেতরকার গণতন্ত্রের সংগ্রামকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে।

দেশটিতে ‘বেসামরিক সরকার’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে মদদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে এবং জান্তাবিরোধী এনইউজি সরকারের কথাও সেখানে আছে। দেশটির বর্তমান সামরিক সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ‘বেআইনি’ কর্তৃপক্ষ মনে করছে এবং তাদের যারা তহবিল দেবে- এমন শক্তির বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র শক্ত ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে রাশিয়া ও চীন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিলে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে বলেও ‘বার্মা অ্যাক্ট’ বলছে। জান্তার শক্তি কমাতে মিয়ানমারের জ্বালানি খাতও এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় লক্ষ্যবস্তু হবে বলে উল্লেখ রয়েছে এতে। খনিজ জ্বালানি এই মুহূর্তে স্থানীয় সেনা-তহবিলের বড় উৎস।

বার্মা অ্যাক্ট অনুমোদনের পাশাপাশি এনডিএ নামে পরিচিত বাইডেন প্রশাসনের ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট অনুমোদন একসঙ্গে মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র কত ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এনডিএ র অংশ হিসেবে বার্মা অ্যাক্ট অনুমোদনের খবর মিয়ানমারে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এতে দারুণ উজ্জীবিত। অন্যদিকে জান্তা এই খবরে তার দমন-পীড়ন আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা এখন ২০০৮ সালের বিতর্কিত সংবিধানের আলোকে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে এক দফা জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে।

মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়াতে সামরিক শাসনকে একটা বেসামরিক প্রচ্ছদ দিতে চাইছে। সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি পার্টিকে প্রস্তুত করছে। আবার সু চির এনএলডি থেকেও কিছু সংগঠককে নিজেদের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে বার্মা অ্যাক্টের পর গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা এবং সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সশস্ত্র দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাড়তি সহায়তা আশা করছে, যা অস্ত্রপাতি না হলেও ‘কারিগরি সহায়তা’ আকারে সশস্ত্র লড়াইয়ের নিরস্ত্র জ্বালানি হিসেবে তাদের কাজকে আরও গতি দেবে। এই দুই ধারার গেরিলাদের হাতে দেশটির প্রায় অর্ধেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইতিমধ্যে। এত দিন এ রকম কোনো কোনো সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও ভবিষ্যতে সেটা হয়তো পাল্টাবে এমনটাই মনে করেন ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

মিয়ানমারের ভেতর যে চারটি অঞ্চলে এই মুহূর্তে গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা বেশি, সেগুলো হলো কাচিন, চিন, কারেন ও রাখাইন এলাকা। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর স্থল ও বিমান আক্রমণে এসব এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি আহত ও নিহত হচ্ছেন। জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধও এসব অঞ্চলেই বেশি। অং সান সু চির দলের নেতারা ধর্মে বৌদ্ধ হয়েও এসব এলাকায়ই আশ্রয় পেয়েছেন বেশি।

১৯৩৫ সালে ভারত থেকে মিয়ানমারকে আলাদা ‘রাষ্ট্র’ করেছিল ব্রিটিশ শক্তি। আর ১৯৫৩ সালে নেহরু-নে উইন একটা সীমান্ত কল্পনা করে নিয়েছিলেন সেখানে। এভাবে কৃত্রিমভাবে বিভক্ত জাতিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ঔপনিবেশিক কালের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে সুখী নয়। ব্রিটিশ শাসনের আগে তারা কেউ দিল্লি বা রেঙ্গুনের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। তাদের ঐতিহাসিক অসুখী মনোভাবেরই ছাপ দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী সংগ্রামে কাচিন, চিন, রাখাইন ও কারেনদের লড়াইয়ে এবং তার প্রতি মিজো ও নাগাদের মনস্তাত্ত্বিক সমর্থনে।

নামে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ হলেও এই আইন যুক্তরাষ্ট্র ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় নয়। মিয়ানমারের জান্তার বড় এক অভিভাবক বেইজিংয়ের নেতৃত্ব। ফলে নতুন পরিস্থিতির আঁচ লাগবে সরাসরি তাদের গায়েও।

তবে বাংলাদেশের জন্যও এই আইন- পরবর্তী ভবিষ্যৎ গুরুত্বপূর্ণ ভাবনার জায়গা তৈরি করছে। মিয়ানমার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভঙ্গি দক্ষিণ এশিয়ার এদিকে কূটনীতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা ছড়াতে পারে। এরকম উত্তেজনা সব সময় যে সীমান্তের কাঁটাতারে আটকে নিথর হয়ে থাকে, তা নয়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ সীমান্তে বিদ্রোহী আরাকান বাহিনীর সঙ্গে জান্তাবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধই তার প্রমাণ।

একালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্টের কথা শুনে অনেকের মনে পড়তে পারে কার্ল মার্ক্সের সেই বিখ্যাত উক্তির কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘ইতিহাস নিজের পুনরাবৃত্তি করে। প্রথমে সেটা ঘটতে পারে ট্র্যাজেডি আকারে, পরে সেটা ঘটে প্রহসনরূপে।

বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ