24 C
আবহাওয়া
১:৩৬ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমদ আলহাছানীর অনন্য সৃষ্টি “The Way of Salvation “

সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমদ আলহাছানীর অনন্য সৃষ্টি “The Way of Salvation “

সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমদ আলহাছানীর অনন্য সৃষ্টি "The Way of Salvation "

।।শাহজাদী সৈয়দা সায়েমা আহমদ।।

“The Way of Salvation” সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমদ আলহাছানী মাইজভান্ডারীর অনন্য সৃষ্টি। বইটি ইংরেজীতে লেখা। পবিত্র কোরান ও হাদীসের ব্যখ্যার মাধ্যমে তিনি সকল মানুষকে শান্তি, মানব সমাজে বিরাজিত বিবিধ সমস্যা -সমাধান ও মানবমনে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের সুন্দর যুক্তিযুক্ত সমাধান তুলে ধরেছেন। বর্তমান মানবসমাজ এবং মুসলিম সমাজ বিভিন্ন বিভক্তি , শ্রেণি ,হানাহানি, মারামারীতে লিপ্ত হয়ে পরেছে l অন্যায় ,অত্যাচার ,বিশৃঙ্খলা ,বেয়াদবী, মোনাফেকী বা মানুষের লুকানো দুষ্ট চেহেরার প্রকাশে মানুষ বা মুসলমান আজ বিন্দুমাত্র লজ্জিত নয়। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা “আশরাফুল মাখলুকাত” এ কথা যেন মানুষই ভুলে গেছে।

এমন যুগসন্ধিক্ষনে তাঁর এই প্রয়াস যথার্থই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। মানুষের কর্ম তথা মানুষের আদবকায়দা , ভদ্র আচার-আচরণ ,ব্যবহার, সত্যবাদিতা , ধৈর্যশীলতা , সহনশীলতা , কৃতজ্ঞ হওয়া, শোকরানা আদায় , তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা এবং আর অন্যায় না করার জন্য নিজেকে দোষ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা, ধ্যান করা, আল্লাহ-ভীতি, আল্লাহর আশা করা, ত্যাগী হওয়া, ক্ষমা করা এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলদের, তাঁদের সঙ্গীদের, তাঁদের পরিবারের প্রতি অকৃত্রিম, অকুন্ঠ, শর্তহীন ভালবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, অনুসরণ ও অনুকরনের প্রতি তিনি তাগিদ দিয়েছেন। বইটি সহজ সরল ইংরেজিতে লিখিত, তাই এর সহজবোধ্যতা মানুষের কাছে এটাকে আরো গ্রহণীয় এবং প্রয়োজনীয় করে তুলেছে l সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমদ আলহাছানী মাইজভান্ডারী ১৯৩৮ সনের ১০ই ফেব্রুয়ারি; ২৭শে মাঘ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ৯ই জিলহাজ্ব ১৩৫০ হিজরী এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন।

পিতৃকূলের দিক দিয়ে তিনি আওলাদে রাসুল হযরত গাউছুল আজম শাহছুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এবং তারই ফয়ুজাত প্রাপ্ত ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত গাউছুল আজম শাহছুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারী (কঃ) এর মেঝ শাহজাদা হযরত গাউছে জামান সুলতানুল মাশায়েখ সৈয়দ আবুল বশর আল মাইজভান্ডারী (কঃ) এর তৃতীয় শাহজাদা হন। আর মাতৃকূলের দিক দিয়ে তিনি সাইয়েদেনা ইমাম হুসাইন (রাঃ)এর বংশধর হযরত মুফতি গরীবুল্লাহ আল হোসাইনী (রাঃ) এর পুত্র ফয়জুল বারী এর বিদূষী কন্যা সৈয়দা জাহানারা বেগমের সুযোগ্যো পুত্র । তাঁর শৈশব এবং প্রাথমিক স্কুল জীবন তাঁরই পিতা ও মাতার তত্বাবধানে পবিত্র কোরআন হাদীস সহ আরবী, বাংলা, ইংরেজী ও ফার্সি ভাষার বিশেষ জ্ঞানের মাধ্যমে কাটে। মূলত পিতা মাতার এই সাহচর্য্যই প্রত্যেক মানুষের জীবনের অমূল্য সম্পদ। কারণ এই সময়েই গড়ে উঠা শিক্ষার ভিত্তিই মূল যা পরবর্তীতে বিরাট মহীরুহে পরিনত হয়। ১৯৫৪ সনে কলেজিয়েট স্কুলে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ডঃ ইউনুস, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খান, সাবেক নৌবাহিনী প্রধান মুহাইমিনুল ইসলাম সহ দেশের খ্যতিমান কৃতি সন্তানগণ তাঁরই স্কুল জীবনের সহপাঠী ছিলেন। সরকারী কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।

উল্লেখ্য যে,  ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতিও করেন। চট্টগ্রামের প্রাক্তন ও প্রয়াত মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রাক্তন ও প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন মেয়র মীর নাসির ও মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সহ সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন যে তিনি পূর্বে ও তাঁদের নেতা( ছাত্র নেতা ) ছিলেন এখনো( পরবর্তীতে ) তাঁদের নেতা ( আধ্যাত্মিক)। যদিও তিনি তাঁর আব্বাজান এর নির্দেশে শিক্ষা পরবর্তী জীবনে রাজনীতি পরিহার করেন। আমাদের বাঙালি জাতির পিতা, প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে সৈয়দ সাহেব বলে সম্বোধন করতেন এবং তাঁর বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করতেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেশ গ্রহণ করেছেন। প্রাক্তন ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান, বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, প্রাক্তন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সহ অসংখ্য মন্ত্রী, এম পি গণ (যাদের মধ্যে এখন কয়েকজন প্রয়াত ) এবং অগনিত জ্ঞানী ও দেশে বিদেশে বিশিষ্ট লোকগণ তাঁর উপদেশ গ্রহণ এবং অনুসরণ করেছেন। ১৯৫৯ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হাবিব ব্যংকে জেনেরাল ম্যানেজার পদে আসীন ছিলেন lতিনি তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার নিয়ে যখন ব্যস্ত, ১৯৬২ সনের ৫ই এপ্রিল বাবাভান্ডারীর ২২শে চৈত্রের ওরশের মধ্যরাতে ২.৩০ মিনিটে তাঁর আব্বাজান তাঁকে বায়াত এ খাস দান করেন অর্থাৎ তাঁকে দরবারের আশেকানদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। সেই থেকে তাঁর অlধ্যাত্মিক ও ত্বরিকার জগতে চলার শুরু। বাবা মঈনউদ্দিন আজ বিশ্বজগতের জ্ঞানী, গুনী লক্ষ কোটি আশেকানদের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম। ধর্মীয় গোঁড়ামি, সংকীর্ণতা নয়, উদারতায় তিনি স্বস্তিবোধ করতেন। ১৯৮৮ সনে সুন্নিয়তের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনে এবং বিভিন্ন আন্তধর্মীয় কোন্দল নিরসনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। দেশ-বরেন্য আলেম – ওলামা, পীর মাশায়েখ ও গুনীজন তাঁকে সর্বসন্মতিক্রমে ‘ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত, বাংলাদেশ ‘ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষনা দেন। তাঁরই বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৯২ সাল থেকে যথাক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা শহরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালিত হয়ে আসছে।

এরপর আন্তজাতিক অঙ্গনে তার পথযাত্রার শুরু। পাক-ভারত উপমহাদেশ, আরব অমিরাত, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, কানাডা, সিঙ্গাপুর সহ এশিয়া, ইয়রোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা প্রায় সবকটি মহাদেশেই তাঁর আদর্শে মুগ্ধ হয়ে এ যাবৎ লক্ষাধিক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, ত্বরিকতের দীক্ষা গ্রহণ করে এবং ঐসব জায়গায় তিনি সবরব সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন দুই হাজারেরও অধিক মসজিদ, খানকা, এবাদতখানা। বিভিন্ন এবাদতখানায় শিশু শিক্ষা, কুরআন শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা সহ সুন্দর জীবন করার লক্ষ্যে তাসাউফ ভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে।

সদালাপি, মিষ্টভাষী ও নিরহংকারী এই মহান জ্ঞানতাপস অতি অল্প দিনের মধ্যেই বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদদের দৃ্ষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ১৯৯৬ সনে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত International Sufi Symposium এ তাঁকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় । International Association of Sufism ঐ বছরই তাঁর মধ্যে বিদ্যমান শান্তি মৈত্রী ও সম্প্রীতি লক্ষ্য করে একমাত্র তাঁকেই Honourable Adviser হিসেবে সাদরে গ্রহণ করেন।

২০০০ সনের ২৮-৩১ শে আগস্ট তারিখে জাতিংসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘Millenium World Peace Summit of Religious and Spiritual Leaders’ সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করে সমগ্র বিশ্বকে মদীনার সনদ অনুসরণ করতে আহবান জানান এবং মিলাদে মুস্তফা (সাঃ) এর শুভসূচনা সর্বপ্রথম তিনিই সুললিত কন্ঠে করেন যা ওখানে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ ও একিসাথে আলোড়িত করে। একই সনে উজবেকিস্তান সরকার ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘International Workshop on Sufism and Religious Dailogue’ সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন বিশেষ মেহমান হিসেবে। তাসখন্দ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, সমরখন্দ ও বুখারা শহরের মেয়রদ্বয় তাসখন্দ পররাষ্ট্র ও ধর্মমন্ত্রনালয় তাঁকে বিশেষ সম্বর্ধনাও প্রদান করেন। ২০০৫ সনের ২৭শে আগস্ট African International Islamic Mission for World Peace and Ghana National Celebration এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী সন্মেলনে – “The World Ambassador for Islam, Universel Peace, Reconciliation, Spiritual Upliftment and Development of Human International Award of the Decade for the year 2005”- অর্থাৎ বিশ্বে শান্তির দূতের সন্মাননায় তিনি ভূষিত হন। এ প্রাপ্তি সমগ্র জাতির জন্য বিরল।

পরিশেষে এটাই বলব, উনার লিখিত The Way of Salvation এ উনি তুলে ধরেছেন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্যাবলী, জিকির , দরুদ এর ফজিলত, ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে ,পবিত্র মেরাজ রজনী ও শবে বরাত, শবে কদর এরকম আরো অসংখ্য মানব মনের প্রশ্নাবলী ও তার সমাধান। এ মহৎ কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা তিনি অতিক্রম করেছেন সাহসের সাথে, আল্লাহর উপর বিশ্বাসী হয়ে এবং সফলকাম ও হয়েছেন।

তিনি মা -বাবা, ভাই -বোন, স্ত্রী -পুত্র-কন্যা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বিভিন্ন দূর্যোগ কবলিত হতদরিদ্র, অসহায় মানুষ সকলের পাশে থেকে মানবতার হক আদায় করেছেন। পবিত্র কোরানে আল্লাহ পাক বলেনঃ “সাবধান ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, এমনকি তাঁরা সামান্যতম চিন্তাযুক্তও হইবে না।”(সূরা ইউনুস ,আয়াতঃ ৬২) । আবার সূরা মুনাফেকুন এর ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর সন্মান তো আল্লাহর , তাঁর রাসুল ও মোমিনদের জন্যই কিন্তু মুনাফিকদের খবর নেই।

বিএনএ/ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ