বিএনএ, ঢাকা : বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য এবং অডিও ফাঁসে সমালোচনায় থাকা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবারের (৭ নভেম্বর) মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা এরই মধ্যে অবহিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে নিজের সরকারি বাসভবনে ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রতি এক ফেসবুক লাইভ সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ । সেটি ভাইরাল হলে অনেকেই তার বক্তব্যের সমালোচনা করেন। সমালোচনাকারীদের মধ্যে আওয়ামীলীগের অনেকে নেতাকর্মীও যোগ দেন।
এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ৪০ নারী অধিকারকর্মী। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে ‘লিঙ্গবাদী’, ‘কুৎসিত যৌন হয়রানিমূলক’ বলেও আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেন তারা। বিবৃতিতে নারী অধিকারকর্মীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পদে আসীন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর মুখে এই ভাষা বাংলাদেশের আপামর নারীদের অপমান এবং অসম্মান করেছে বলে আমরা মনে করি। এর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিকে সমাজ এবং রাষ্ট্রে কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠিত করার বৈধতা দেওয়া হয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে তার ক্ষমা চাওয়া ও পদত্যাগের দাবি তোলা হয়।
তবে সোমবার প্রতিমন্ত্রী নিজে অবশ্য এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান-দাবি সবকিছুকেই নাকচ করে দেন। সমালোচকদের গালিগালাজ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। নিজ দলের সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘উনারা নিজেদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়েও বড় নেতা মনে করেন।’
কিন্তু সোমবার রাতে এক চিত্রনাায়িকার সঙ্গে তার একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তিনি ওই নায়িকাকে হুমকি দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে জোর করে ওই নায়িকাকে তার কাছে তুলে আনবেন। ওই ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তোপের মুখে পড়েন ডা. মুরাদ।
চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহির সঙ্গে সেই কথোপকথনে ডা. মুরাদকে অশালীন কথা বলতে শোনা যায়। মাহিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তার ভাড়া করা রুমে আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি না এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তাকে তুলে নেওয়া হবে। ওই সময় তাকে যৌন সহিংস কথাবার্তা বলতেও শোনা যায়।
ফোনে ডা. মুরাদ এটাও জিজ্ঞেস করেন ওই নায়িকাকে তিন নম্বর নাকি চার নম্বর বউ হবে।
এমন কিছু কথা বার্তাও সেখানে বলা হয় যা প্রকাশযোগ্য না।
ওই ফোনালাপ প্রকাশের পর থেকে আর মিডিয়ায় কথা বলেননি তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
তবে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি ‘সঠিক’ বলে স্বীকার করেছেন চিত্রনায়ক ইমন। ঘটনাটি দুই বছর আগের দাবি করে ইমন জানান, একটি ছবির মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে ফোন দেন প্রতিমন্ত্রী।
ইমন বলেন, ডিরেক্টর সুমন ভাইসহ (ওয়াজেদ আলী সুমন) আমরা মিটিং করছিলাম। তখন উনি (প্রতিমন্ত্রী) হঠাৎ ফোন দিয়েছেন। তিনি কিন্তু প্রথমেই বলেছেন, ‘তুই ফোন ধরস নাই কেন?’ পরে উনিই আবার ফোন দিয়েছেন। এটা ২০২০ সালের করোনারও আগের ঘটনা। একজন মন্ত্রী বারবার ফোন দিচ্ছেন, আমি কিন্তু বলেছি, ‘হ্যাঁ, ভাই আসতেছি। দেখছি ভাই’। তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডা. মুরাদ যেকোনও আর্টিস্টকে ফোন দিতেই পারেন উল্লেখ করলেও চিত্রনায়ক ইমন মনে করেন, ‘এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য।’ তবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, তিনি নিজে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মাত্র।
ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এই রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদল করতেন। তিনি বলেন, পরে অবশ্য মুরাদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে সোমবার দুপুরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম