বিএনএ, ঢাকা: বিশ্বের সবচেয়ে বড় এয়ারবাস এ-৩৮০ সহ একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে। ১২৮টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার আর ১১৫টি চেক ইন কাউন্টারে যাত্রীরা সহজেই আনুষ্ঠানিকতা সারতে পারবেন। পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য রয়েছে ৩৩ হাজার বর্গমিটারের স্বয়ংক্রিয় কার্গো টার্মিনাল।
শনিবার (৭ অক্টোবর) অত্যাধুনিক এ টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ টার্মিনালের মাধ্যমে সহজ ও স্বল্প সময়েই ইমিগ্রেশন করতে পারবেন যাত্রীরা। দেশে প্রথম অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশন।
টার্মিনাল ও রানওয়ে এক যোগে চালু হলে ৩৭ থেকে ৪২টির মতো এয়ারক্রাফট রানওয়েতে এক সাথে থাকতে পারবে। নতুন ভবনটি নির্মাণের পর কারুকাজ ও সাজানোর কাজ প্রায় শেষ। এখন প্রতি বছর এই শাহজালাল বিমানবন্দরের দুই টার্মিনালে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী সেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু নতুন থার্ড টার্মিনাল চালু হলে তা প্রায় আড়াই কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাত দিন সমান তালে কাজ করছেন শ্রমিকরা। আগের তুলনায় শ্রমিক বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রূপে দৃশ্যমান হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল। সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ। এখন চলছে পিচ ঢালাইয়ের জন্য বালু ফেলে সমান করা। উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।
শাহজালালের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে যাতায়াতে যে ভোগান্তি পোহাতে হয় তেমনি আর এখানে হবে না। এজন্য যাত্রীদের সুবিধার্থে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুইটি র্যাম্প যুক্ত করা হয়েছে। যা থার্ড টার্মিনালের আগমনী ও বহির্গমনে যুক্ত করা আছে। ফলে খুব অল্প সময়ে বিদেশগামী যাত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে টার্মিনালের গেটে পৌঁছাবেন। একইভাবে ভোগান্তি ছাড়াই তারা খুব সহজেই বের হয়ে যেতে পারবেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
একইভাবে এলিভেটেড এক্সপেসের সুবিধা শাহজালালের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের জন্যও মিলবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আরেক র্যাম্প নামানো হয়েছে বলাকা ভবনের পাশে। এই র্যাম্প ব্যবহার করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে যাওয়া যাচ্ছে। এখন দুই টার্মিনালের যাত্রীরা র্যাম্প দুটি ব্যবহারও করছেন। আবার এই দুই টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে কাওলা এলাকা থেকে আরেক র্যাম্পের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারছেন যাত্রীরা।
টার্মিনালের তৃতীয় তলার গেট হয়ে যাত্রী ভেতরে প্রবেশ করবেন। টার্মিনালে প্রবেশের পরই যাত্রীকে যেতে হবে বোর্ডিং ব্রিজে। সেখানে তাকে বোর্ডিং পাস দেয়া হবে।
এরপর তিনি সোজা চলে যাবেন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। এজন্য সিকিউরিটির জন্য যেসব বিষয় মানা জরুরি তা একজন যাত্রীকে মানতে হবে। সে প্রসেস মানার জন্য হ্যান্ড লাগেজ ও বডি স্ক্যানারে অংশ নিতে হবে। এজন্য নতুনভাবে বসানো হয়েছে নতুন বডি স্ক্যানার মেশিন। এই মেশিনে যাত্রীর শরীরে কোথায় কি জিনিস রাখা হয়েছে তার দৃশ্য পাশে থাকা কম্পিউটারে ভেসে উঠবে।
ইমিগ্রেশ শেষে যাত্রী তৃতীয় তলা থেকে সিঁড়ি বা লিফট দিয়ে নেমে সোজা চলে যাবেন দ্বিতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলাতেও বড় বড় এলইডি মনিটর রাখা হয়েছে শুধুমাত্র বিমান কখন ছাড়ছে এসব তথ্য জানানোর জন্য। তবে বাংলা ও ইংরেজী দুই মাধ্যমে বার্তাগুলো ভেসে উঠবে মনিটরে। সেখানে তাকে অপেক্ষা করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে স্টিলের বেঞ্চ ও চেয়ার। ডাক পড়লে যাত্রীকে এয়ারক্রাফটে ওঠার জন্য নিতে হবে বোর্ডিং পাস। এরপর তিনি সোজা প্লেনে গিয়ে উঠবেন।
অনদিকে যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা বোর্ডিং ব্রিজ হয়ে সোজা তৃতীয় তলায় যাবেন। সেখানে ইমিগ্রেশন শেষ করে তারা নিচতলায় যাবেন। সেখানে লাগেজ নিয়ে এরপর নিচ দিয়ে গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে তারা নিজ নিজ বাসা বা হোটেলে চলে যাবেন।
নতুন এই টার্মিনালে বিদেশগামী যাত্রীরা পাবেন ডিউটি ফি শপের সুবিধা। তা থাকছে দ্বিতীয় তলায়। এছাড়াও থাকবে মানি এক্সচেঞ্জ ও ফুড কর্নার। একইভাবে নিচেও থাকবে মানি এক্সচেঞ্জ। তবে এগুলো এখনো প্রস্তুত হয়নি।
যাত্রীদের সঙ্গে আগতদের আত্মীয়-স্বজনদের বসার জন্য ব্যবস্থা থাকছে এই টার্মিনালে। এজন্য তারা যাত্রীর সাথে টার্মিনালে প্রবেশ করবেন। কিন্তু এসময় তাদেরকে আলাদা করে রাখা হবে। সেখানে রেস্টুরেন্ট থাকবে। তারা সেখান থেকে বসে স্বজনরা কিভাবে বিদেশ যাওয়ার প্রসেসগুলো সম্পন্ন করছে তা দেখতে পাবেন। তবে তাদেরকে কোন জায়গায় বসতে দেয়া হবে তা এখনো ঠিক করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।
থার্ড টাার্মিনালে একসাথে এক হাজার ২৩০টি গাড়ি একই সাথে পার্কিং করা যাবে। এজন্য টার্মিনালের বাহিরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা বিশিষ্ট কার পার্কিং জোন তৈরি করা হয়েছে। এটি কাজ শেষ হয়েছে। এখন ছোটখাট কাজগুলো করছেন শ্রমিকরা। নিচ থেকে প্রতিটি তলায় যেতে ইউলুপের মতো রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে আর কোনো যাত্রীকে তার গাড়ি রাখা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। এসব গাড়ি যাতে বেহাত না হয় সেজন্য সিকিউরিটি ব্যবস্থাও থাকছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে, আপাতত ১২টি বোর্ডিং বসবে। তবে এরপর পর্যায়ক্রমে তা ২৬-এ পৌঁছাবে। এসব বোর্ডিং ব্রিজের সক্ষমতা হবে প্রায় ১২ মিলিয়ন। সাথে আরও দুটি পিআর বৃদ্ধি পাবে। ২৪ মিলিয়ন যাত্রী সেবা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এত যাত্রীর চাপ সামলানো কঠিন। ফলে জাপানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজটি দিতে চায় বাংলাদেশ সরকার। তারাও আগ্রহী হয়েছে। তারা কিভাবে কাজ করবে এবং কি পরিমাণ রাজস্ব বাংলাদেশ সরকারকে তারা দেবে এসব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এজন্য পিপিপি অথোরিটি কাজ করছে। তারপর সব কিছু যাচাই বাছাই করে বেবিচক সেই জাপানের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, সফট লঞ্চিং (উদ্বোধনের পর) এখন হলেও অপারেশন হতে আরও সময় লাগবে। কারণ বড় বড় ইকুপমেন্টগুলো বসানো হয়েছে। অনেকগুলো লাউঞ্চ থাকবে। কানেকটিভিটি থাকবে যাতে সহজে একজন যাত্রী হোটেলে যেতে পারে। এজন্য বেবিচকের সাথে যৌথ মালিকানায় বিমানবন্দরের নিকটে হোটেলও করার প্রস্তুতি চলছে। সবমিলে অপারেশন থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় ঢেলে সাজানো হয়েছে।
বিএনএ/এমএফ