বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : উত্তর কোরিয়া এবছর ৩০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এসব পরীক্ষার মধ্যে দীর্ঘ পাল্লার কিছু ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রেও আঘাত হানতে পারে।
এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং হাইপারসনিক মিসাইল।
হাইপারসোনিক মিসাইলের গতি অত্যন্ত বেশি। এটি শব্দের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি গতিতে উড়তে পারে। এছাড়াও এটি অল্প উচ্চতায় উড়ে যায়, যার ফলে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি র্যাডারে ধরা পড়ে না।
জাপানের ওপর দিয়ে সম্প্রতি যে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে সেটি মধ্যম পাল্লার একটি মিসাইল যার নাম হুয়াসং-১২।
এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৪,৫০০ কিলোমিটার যা দিয়ে উত্তর কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম দ্বীপেও আঘাত হানা সম্ভব।
“উত্তর কোরিয়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে,” বলেন রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের জোসেফ বার্ন।
“জাপানের ওপর দিয়ে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে এটা সবচেয়ে দীর্ঘ পাল্লার। এটি ভবিষ্যতে পরমাণু অস্ত্রবাহী আরো একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ইঙ্গিত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে আগামীতে যেকোনো সময়ে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চালাতে পারে,” বলেন তিনি।
এছাড়াও উত্তর কোরিয়া হুয়াসং-১৪ ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালাচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৮,০০০ কিলোমিটার। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে এটি ১০,০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারে।
এর অর্থ উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র নিউ ইয়র্কেও পৌঁছাতে সক্ষম। এটাই উত্তর কোরিয়ার প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল।
হুয়াসং-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ১৩,০০০ কিলোমিটার বলে ধারণা করা হয় যা দিয়ে উত্তর কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্থানে আঘাত করা সম্ভব।
উত্তর কোরিয়া ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তাদের সর্বাধুনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল হুয়াসং-১৭ উন্মোচন করে। ধারণা করা হচ্ছে এর পাল্লা ১৫,০০০ কিলোমিটার কিম্বা তার চেয়েও বেশি।
এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্ভবত তিন থেকে চারটি ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। ওয়ারহেড হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্রের এমন একটি মাথা যা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
সাধারণত অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো একটি ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।
একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারার কারণে আক্রান্ত কোনো দেশের পক্ষে হুয়াসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে প্রতিরোধ করা কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তুলে ধরার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনকে দেখাতে চাইছে সামরিকভাবে তারা কতোটা শক্তিশালী।
দেশটি ২০২১ সালের মার্চ মাসে নতুন ধরনের একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এটি কৌশলগত বা ট্যাকটিক্যাল একটি ক্ষেপণাস্ত্র যা আড়াই টন ওজনের বিস্ফোরক বহন করতে পারে।
এর মানে হচ্ছে এই অস্ত্রটি তাত্ত্বিকভাবে পরমাণু ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।
জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজের বিশ্লেষকরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন উত্তর কোরিয়া এর আগে কেএন-২৩ নামের যে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্রটি তারই উন্নত সংস্করণ।
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু চুল্লি পুনরায় চালু
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন যে উত্তর কোরিয়াতে পারমাণবিক সামগ্রী সমৃদ্ধ করার যতো স্থাপনা আছে সেগুলো তারা ধ্বংস করে ফেলবেন।
তবে জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা বলছে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে উত্তর কোরিয়া তাদের চুল্লিগুলো পুনরায় চালু করেছে। এসব চুল্লিতে পরমাণু অস্ত্র তৈরির উপাদান তৈরি করা হয়।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ আরো বলছে যে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি পুরোদমে চলছে।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্লুটোনিয়াম আলাদা করা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা ইত্যাদি।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।