26 C
আবহাওয়া
১০:১২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি ফজলুলকে

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি ফজলুলকে


বিএনএ, ময়মনসিংহ: জন্ম থেকেই ফজলুল হকের পা দুটি অকেজো। তারপরও থেমে নেই তার পথচলা। এ অকেজো পা নিয়েই হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে গিয়ে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পাস করেছে সে। এখন পড়ছে দ্বাদশ শ্রেণিতে। তার স্বপ্ন লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করা।

ফজলুল হক ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়ার ইছাইল নতুনবাজার ফরাজিবাড়ি এলাকার গাছকাটা শ্রমিক লাল মিয়ার ছেলে। তারা পাঁচ ভাই ও এক বোন। সবার বড় ফজলুল হক। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ভাই হোটেলে কাজ করেন। অপর তিন ভাই ছোট। তারা বাড়িতেই থাকেন।

ফজলুল হকের বাবা লাল মিয়া বলেন, জন্মের সময় তার পা দুটু সামনের দিকে বাঁকা ছিল। ভেবেছিলাম কয়েক মাস গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বয়স যখন তিন থেকে চার মাস হয় তখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করি। তখন ডাক্তার বলেছিল, তার পা সোজা হবে না। তারপর ঢাকার ডাক্তারও দেখানো হয়। কিন্তু তারাও একই কথা বলেছেন। এভাবেই সে বেড়ে উঠে কিন্তু ফজলুল হকের পা ভাল হয়।

শ্রমিক লাল মিয়া আরও বলেন, সেই শিশু বয়স থেকেই ফজলুল হকের লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ।পরিবারের আর্থিক অবস্থা অস্বচ্ছল হওয়ায় তাকে তেমন সহযোগীতা করতে পারিনি। ৮ম শ্রেণী পাশ করার পর সে বিজ্ঞান শাখায় পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু সংসারের অভাব অনটনের কারণে তাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করতে পারিনি। তাছাড়া, সে ৮ম শ্রেণী পাশ করার পর থেকে টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছে ও পরিবার থেকে কিছুটা সহায়তা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এরপর সে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এখন নিয়মিত কলেজে যায়। বাড়ি থেকে কলেজ প্রায় তিন কিলোমিটার। যে দিন গাড়ি ভাড়া থাকে অটোরিকশা দিয়ে কলেজে যায়। কলেজের সামনে অটোরিকশা থেকে নেমে হাতে জুতা পড়ে হামাগুড়ি দিয়ে যায়। যে দিন গাড়ি ভাড়ার টাকা না থাকে সেদিন হামাগুড়ি তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে যায়।

সরেজমিনে সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফজলুল হক (১৭) হাতের তালুতে জুতা লাগিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যাচ্ছে। ক্লাস্ত হয়ে পড়লে কিছুক্ষন জিরিয়ে আবারও ছুটছে কলেজের দিকে। এভাবেই প্রতিদিন কলেজে পড়তে আসে শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোর ফজলুল।

ফজলুল হক বলেন, আমার পরিবার দরিদ্র। ছোট থেকেই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। পিএসসি’তে ৪.৫০, জেএসসি’তে ৩.৫৭ ও এসএসসি’তে ৩.৬১ পেয়ে পাশ করেছি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করার। কিন্তু, পরিবারের আর্থিক অচ্ছলতার কারণে মানবিক শাখায় লেখাপড়া করেছি।

ফজলুল হক বলেন, আমার পরিবারের পক্ষে পড়াশোনা চালানো সম্ভব না। আমি টিউশনি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাই। কিছু টাকা পরিবারকে দেই। কষ্ট করে হলেও আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে চাই।

ফজলুলের মা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার ছেলের লেখাপড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ। আমরা তাকে লেখাপড়া করাতে চাই। সে জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

হলি-চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অর্থনীতির সিনিয়র প্রভাষক হুমায়ুন কবীর বলেন, ফজুলল যে দূর থেকে আসে সেখান থেকে কোন সুস্থ মানুষও এখানে পড়তে আসবে না। তার ইচ্ছা আছে বলেই এখানে সে কষ্ট করে পড়তে আসে।

হলি-চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ নাজমুল হোসাইন বলেন, কলেজটিতে ফজলুলকে কোন বেতন, পরীক্ষার ফি দিতে হচ্ছে না। এখান থেকে সে যখন বেরিয়ে যাবে তখন ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে প্রতিবন্ধী কোটা থাকে। সেটার জন্য আমরা চেষ্টা করব। পাশাপাশি ফজলুল ও তার পরিবারকে আর্থিক ভাবে কিভাবে স্বাবলম্বী করা যায়। সেটাতেও তাকে আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করব।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) পুলক কান্তি চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিএনএ/হামিমুর, এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ