22 C
আবহাওয়া
২:৩১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৫ (ভোলা-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৫ (ভোলা-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ভোলা-১ আসনের হালচাল।

ভোলা-১ আসন

ভোলা-১ সংসদীয় আসনটি প্রমত্তা মেঘনা আর তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১১৫ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিজয়ী হন 

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ৫ শত ৯৪ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৮ হাজার ৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৪শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির নাজিউর রহমান মনজুর। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৬শত ৪৪ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোশারেফ হোসেন শাহজাহানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির মোশারেফ হোসেন শাহজাহানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭ শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১১ হাজার ৭ শত ৯৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোশারেফ হোসেন শাহজাহান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৭ শত ৫৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোশারেফ হোসেন শাহজাহান বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৫ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫ শত ৩৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোশারেফ হোসেন শাহজাহান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ৯ শত ০৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ১০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: ৪ দলীয় ঐক্য জোটের আন্দালিব রহমান পার্থ বিজয়ী বিজয়ী 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৯ শত ৭২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮১ হাজার ১ শত ৭৪ জন। নির্বাচনে ৪ দলীয় ঐক্য জোটের আন্দালিব রহমান পার্থ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ১ শত ৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৪ শত ৮৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৮জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯ শত ৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির গোলাম নবী আলমগীর, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির কেফায়েত উল্ল্যাহ নজিব, কাস্তে প্রতীকে সিপিবি’র একে এম সোহেল আহমেদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইয়াসিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৫ হাজার ৭ শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ ইয়াসিন। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭ হাজার ৮ শত ১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, সপ্তম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম সংসদে ৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ভোলা-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায় ভোলা-১ আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৭.৬৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.২১ %, বিএনপি ২৫.৪৩%, জাতীয় পার্টি ৩২.২৯%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৪৫ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.২৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৮১%, বিএনপি ৪২.৭২%, জাতীয় পাটি ৩.৬০%, জামায়াতে ইসলামী ৫.৪৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৪৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬১.২০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৫৪%, ৪দলীয় জোট ৬২.০৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৩.৮৬%, ৪দলীয় জোট ৫৩.১৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৯৭% ভোট পায়।

জানা যায়, ভোলা-১ আসন থেকে তোফায়েল আহমেদ পাঁচবার এবং ভোলা-২ আসন থেকে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি একক প্রার্থী।

এছাড়া ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান হিরণ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনিপর আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর, ভোলা সদর বিএনপির আহবায়ক আসিফ আলতাফ। ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বিএনপি থেকে, মনোনয়ন চাইবেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইবেন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ওবায়েদুর রহমান বিন মোস্তফা।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোলা -১ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির বেশ প্রভাব রয়েছে। এই আসন থেকে ১১ দিনের ষষ্ঠ সংসদ ছাড়াও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসনটি দখলে নেয়। অষ্টম সংসদে বিএনপি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ছাড় দেয়। বিএনপির সমর্থন ও প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এই নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ক্ষোভও কম নয়। রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর নির্ভর করছে এবার বিএনপি এই আসনটিতে ছাড় দিবে কীনা? দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১১৫তম ভোলা-১ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, এমএফ, ওয়াই এইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ