বিএনএ, বশেমুরবিপ্রবি: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। সেশনজট নিরসনে এই সময়ে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম সচল রেখেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে আপগ্রেডেশন সংক্রান্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য এবার অনলাইনে সচল থাকা একাডেমিক কার্যক্রম থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।
সোমবার (৫ এপ্রিল) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মাে. কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ড. মাে. আবু সালেহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আর্থিক সুবিধাসহ প্রাপ্যতার তারিখ থেকে আপগ্রেডেশন, শিক্ষা ছুটির বিপরীতে যােগদানকৃত শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণ নিয়ে প্রশাসন খামখেয়ালি আচরণ ও সময়ক্ষেপণ করছে। এর ফলে আপগ্রেডেশনের বিষয়টি জটিল থেকে আরও জটিলতর হয়ে উঠেছে এবং শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এসকল বিষয়ে উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতি বারবার আলোচনা করলেও তা শুধু আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চাপের মধ্যে আপগ্রেডেশন এর ভাইভা নিম্নতর বাের্ড (lower Board) শেষ করলেও, দীর্ঘ ১ মাসেও রিজেন্ট বাের্ড সভা আয়ােজনের কোন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৫ এপ্রিলের মধ্যে রিজেন্ট বাের্ড সভা আয়ােজনের কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ৬ এপ্রিল থেকে সকল প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং প্রয়ােজনে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষক সমিতি এই সিদ্ধান্তও উপাচার্যকে অবহিত করে। এরই ধারাবাহিকতায়, শিক্ষক সমিতির সাথে উপাচার্য আলােচনায় বসেন। আলােচনায় উপাচার্য ১২ এপ্রিলের মধ্যে প্রাপ্যতার তারিখ থেকে আপগ্রেডেশন কার্যকর করার লক্ষ্যে রিজেন্ট বাের্ড সভা আয়ােজন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু গত ৪ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি পুনরায় রিজেন্ট বাের্ড আয়ােজন করার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে উপাচার্যের সাথে দেখা করলে তিনি জানান লকডাউন এর কারণে রিজেন্ট বোর্ডের সভা আয়োজন সম্ভব নয়।
এসময় শিক্ষক সমিতি বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ভাইভা নেয়ার জন্য অনুরােধ করে। কিন্তু উপাচার্য অনলাইনে ভাইভা নিবে না বলে শিক্ষক সমিতিকে অবহিত করেন, যদিও তিনি আন্তরিক হলে আরও আগেই সকল পর্যায়ের ভাইভা সমাপ্ত করা সম্ভব ছিল। ফলে, শিক্ষক সমিতি আপগ্রেডেশন নিয়ে উপাচার্যের উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাব বলে তীব্র প্রতিবাদ করে। উপাচার্য কোন অবস্থায় কিছু করতে পারবেন না বলে শিক্ষক সমিতিকে জানায় এবং লকডাউন পরিস্থিতির উত্তরণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি কার্যকরী কমিটির একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গত ২২ মার্চে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় সকল শিক্ষকদের মতামত অনুযায়ি ৬ এপ্রিল থেকে সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সেটি কার্যকর করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ৩০ টা বিভাগের আপগ্রেডেশন ভাইভা শেষ করেছি এবং যে চারটি বিভাগের ভাইভা বাকি রয়েছে সেগুলোও লকডাউন শেষ হলে দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। লকডাউনের জন্য ভাইভা এবং রিজেন্ট বোর্ডের বিষয়টি আটকে আছে। শিক্ষকরা যদি এরপরও বর্তমান পরিস্থিতি না বুঝে এমন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমার কিছু করার নেই।”
এদিকে শিক্ষকদের এ ধরনের কর্মসূচিতে হতাশা প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, “করোনার কারণে ইতোমধ্যে আমরা সেশনজটে রয়েছি। অনলাইন ক্লাসও আশানুরূপ গতিতে আগাচ্ছে না। এসবের মাঝেই শিক্ষকদের এমন কর্মসূচি আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। দাবি আদায়ে তারা অন্য কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারতো। কারণ তাদের সমস্যা মূলত প্রশাসনের সাথে কিন্তু তাদের এই কর্মসূচির জন্য সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।”
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, “আমরাও চাই না শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। কিন্তু আপগ্রেডেশন নিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই সাধারণ শিক্ষকরা এধরণের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকদের প্রাপ্যতার তারিখ হতে প্রমােশন ও শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবিতে এর আগে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি গত বছরের ২৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ধারাবাহিক মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
বিএনএনিউজ/ফাহীসুল হক,মনির