ডা. আলী আজমল ১৯২৮ সালের ১ মার্চ পাবনার শাহজাদপুর থানার পাড়কোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম-মোহাম্মদ সোলেমান এবং মাতার নাম-জোবেদা খাতুন। ১৯৪৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এস.সি. পাশ করে ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে ১৯৪৭ সালে ২য় বর্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে এমবিবিএস চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং ১৯৫৪ সালে আবারও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন কিন্তু রাজনৈতিক কারণে পাশ করতে পারেননি। ১৯৫৫ সালে তিনি নিজ জন্মস্থান শাহজাদপুরে চলে আসেন। সেই থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত উপজেলা সদরে সার্টিফিকেট বিহীন অথচ সফল ও যোগ্য চিকিৎসক হিসেবে প্রাইভেট প্রাকটিস করে গেছেন।
আলী আজমল তাঁর নিজ এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ডাক্তার ছিলেন। তিনি ‘বুলবুল ডাক্তার’ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ১৯৫৫ সাল থেকে শাহজাদপুরের সাধারণ মানুষের সেবায় নিজকে আত্মনিয়োগ করেন। নিভৃত পল্লীতে সহজ, সরল ও সাধারণ জীবন-যাপন করেছেন প্রচারবিমুখ এই মানুষটি। ১৯৫৫ সালে সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে শাহজাদপুরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁর চেম্বারটি সিলগালা করে দেয়। আজীবন সংগ্রামী, ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক এই ভাষাসৈনিক ২০০২ সালের ৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
রাষ্ট্রাভাষা-আন্দোলনে আলী আজমল একটি স্মরণীয় নাম। আলী আজমল ১৯৪৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২য় বর্ষে ভর্তি হন। তিনি ১নং ব্যারাকের ১নং কক্ষে থাকতেন। প্রথম কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে তিনি কমনরুম সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রাভাষা করার দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রথম হরতালে পিকেটিং করতে যেয়ে তিনি আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রিয় কারাগার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা চুক্তির শর্ত অনুসারে তিনি মুক্তি পান। ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটে জড়িত থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের সাথে তিনি আবারও গ্রেফতার হন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়। ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার উদ্দেশে প্রথম দলটির নেতৃত্ব প্রদান করেন আলী আজমল। তিনিই প্রথম গ্রেফতারবরণ করেন এবং ৬ মাস পর মুক্তি পান। এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক বদরুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘দশজনের প্রথম ব্যাচ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতা আজমলের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ভ্যানে তুলে নিয়ে গেল’, (সূত্র: সংবাদ, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০১)। জহির রায়হান বলেন, “…প্রথম যাদেরকে পুলিশ ধরেছিল তাদের মধ্যে ছিল ডা. আলী আজমল।” (তথ্যসূত্র: ভাষা-আন্দোলন কতিপয় দলিল-বদরুদ্দীন উমর, পৃ. ২৩৮)।
ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসে আলী আজমলের এই বীরত্বপূর্ণ অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(৬) আহমেদুর রহমান আজমী