28 C
আবহাওয়া
৭:৫২ অপরাহ্ণ - ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » এখনো নিবন্ধন পায়নি জামায়াত!

এখনো নিবন্ধন পায়নি জামায়াত!


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিএনপি ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন দাবি করলেও জামায়াত ইসলামী সরকারকে সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে চায় মুখে বললেও ভিতরে ভিতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী থাকবে, কিংবা জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের ৩০০ প্রার্থী থাকবে। এ লক্ষ্যে শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ না পাওয়া দলটি ৫ আগস্টের পর দেশজুড়ে কর্মী সম্মেলন, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত নয়। নির্বাচন যখন হবে, তখনকার বাস্তবতায় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। স্থানীয়ভাবে প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিয়েছে। সেই অনুযায়ি নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

YouTube player

গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুরের মতো জেলায়, যেখানে জামায়াতের নির্বাচনী সাফল্য নেই, সেখানেও সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। শুধু ধর্মভিত্তিক নয়, আওয়ামী লীগ বিরোধী অন্যান্য দল নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের জন্যও প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর দুই যুগের মিত্র বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় জামায়াতের। দুই দলের নেতাকর্মীরা একে অন্যের সমালোচনায় মুখর। জামায়াতকে একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা এবং ব্যাংক-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের জন্য অভিযুক্ত করে সমালোচনা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি, দখলবাজির জন্য বিএনপির সমালোচনায় মুখর জামায়াত নেতাকর্মীরা।

সাংগঠনিক শক্তি ও বিস্তৃতিতে এগিয়ে থাকা বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিতে জোট করার চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। গত ২১শে জানুয়ারি বরিশালের চরমোনাইয়ে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে দেখা করেন জামায়াত আমির।

কওমি মাদ্রাসা ঘরানার ছয়টি নিবন্ধিত দলের দুটি ইসলামী ঐক্যজোট এবং খেলাফত আন্দোলন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিল। এই দুটিকে বাদ দিয়ে ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস জোট করতে চেয়েছিল এখনও নিবন্ধন ফিরে না পাওয়া জামায়াতকে নিয়ে। জামায়াতের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করা খেলাফত মজলিস গত মাসে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত নির্বাচনসহ সাত দফায় ঐকমত্য জানিয়েছে।

জামায়াত এবং অন্য দলের নেতারা জানিয়েছেন, শুধু ধর্মভিত্তিক দল নয়, আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিল এমন মধ্যপন্থি দলগুলোকেও জোটে আনার চেষ্টা রয়েছে। ‘ইসলামপন্থিদের উত্থান’ হিসেবে যাতে তকমা দিতে না পারে, সেজন্যই এ কৌশল।

জামায়াত আমির সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলছেন গত আগস্ট থেকেই। নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার কথাও বলেছেন একাধিকবার। এর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তাদের ভাষ্য, ভোটে জয়ের সম্ভাবনা না থাকায় অনির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতা ভোগ করতে চাইছে জামায়াত।

কেন জায়ায়াত ইসলামী নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়? এমন প্রশ্নটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধন হারায় জামায়াত। ২০১৮ সালে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন দলটির নেতারা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে জামায়াতের আপিল খারিজ হয় সুপ্রিম কোর্টে। গত পহেলা আগস্ট নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াত বৈধতা ফিরে পেলেও নিবন্ধন পায়নি। তবে রিভিউয়ে আপিলের অধিকার পেয়েছে।

একাত্তরে গণহত্যাকারী পাকিস্তান বাহিনীকে সমর্থন এবং স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত– এ অবস্থান নিয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দল ছাড়েন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। একাত্তরের অতীত ঝেড়ে ফেলতে নতুন নামে দল করা উচিত কিনা, তা খতিয়ে দেখতে ওই বছরেই ডা. তাহেরের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছিল।

নতুন নামে রাজনীতি করতে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি -বিডিপি নামে দল গঠন করে জামায়াত। এ দলটি ধর্মভিত্তিক নয়। দলের গঠনতন্ত্র এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণের কথা বলা হয়েছে। বিডিপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন চেয়ে ওই বছরে অক্টোবরে আবেদনও করে। সব জেলায় এবং ২০০ উপজেলায় কার্যালয়, ২০০ করে সমর্থকের প্রমাণ হিসেবে ২৮ হাজার পৃষ্ঠার নথি দিয়েছিল বিডিপি।

কিন্তু দলটি জামায়াতের ‘বি-টিম’ এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারণে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন বিডিপিকে নিবন্ধন দেয়নি। গত ২রা ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ে নিবন্ধন পেয়েছে দলটি। বিডিপির দলীয় প্রতীক ফুলকপি। এ দলের পেছনে জামায়াতের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। আগামী নির্বাচনের মাঠে সুবিধা পেতে বিডিপি থেকে ‘ডামি প্রার্থী’ দেওয়া হবে। বিডিপিকে রাজনীতিতে সক্রিয় করা হবে। অনেকগুলো দল যেমন বিএনপির সুরে কথা বলে, তেমনি বিডিপি জামায়াতের সুরে কথা বলবে। তবে বিডিপির সেক্রেটারি জেনারেল নিজামুল নাঈম তা নাকচ করছেন। তিনি বলেছেন, বিডিপি নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

সবমিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত ইসলামী এখন Most Unpredictable একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ