30 C
আবহাওয়া
৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ - মে ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মিয়ানমারে ৩০০ সামরিক চৌকি দখল!

মিয়ানমারে ৩০০ সামরিক চৌকি দখল!


বিএনএ ডেস্ক : মিয়ানমার জান্তা সরকারের নিয়মিত বাহিনী পিছু হটতে শুরু করেছে। দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সাথে সীমান্তবর্তী প্রদেশে সামরিক সরকারের লড়াই এখন তুঙ্গে। একের পর এক সেনাঘাঁটি দখল করে নিচ্ছে বিদ্রোহী বাহিনী। জান্তা বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশে। অভ্যান্তরীন যুদ্ধে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে মিয়ানমার পরিস্থিতি। এই সংঘাতের আঁচ মিয়ানমারের সীমান্ত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও লাগছে গত বেশ কয়েকদিন ধরে।

মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্ত-ঘেঁষা এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সে দেশটির সেনাবাহিনীর যুদ্ধ এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে মিয়ানমারের বাহিনী। এতদিন এই যুদ্ধকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা হলেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সে দেশের একের পর এক সীমান্তরক্ষী বা সেনা সদস্যর অনুপ্রবেশের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশেও।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যেকার তুমব্রু ঘুমধুম সীমান্তের তিনটি স্থান দিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি-র সদস্যরা রোববার রাত পর্যন্ত ৯৫ জন প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি সদর দপ্তর। এমন অবস্থায় সীমান্তের বাসিন্দাদের মাঝে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে।

রাখাইন অঞ্চলে আরাকান আর্মি যেভাবে শক্তি বাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিয়েছে তাদের, তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছে মিয়ানমার সরকার।

তিন বছর আগে মিয়ানমারে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয় সামরিক সরকার। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জান্তা বিরোধী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে। একই সাথে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন তাদের শক্তি আরো বাড়িয়ে তোলে। এসব গ্রুপও জান্তা সরকারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করে।

তিন বছরের মাথায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির শান ও রাখাইন প্রদেশে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত, তারা এ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
ব্রাসেলাস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টম কিন বলেন “এই সংঘাত একটি ভিন্নমাত্রার ও জটিল বিষয়। এখানে নানা ধরণের পক্ষ জড়িত আছে,”।

মিয়ানমার জান্তা সরকারের উপর চীন ‘খুশি নয়’ বলে উল্লেখ করেন ব্রাসেলাস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টম কিন। কারণ, চীনের বিভিন্ন অপরাধী-চক্র শান প্রদেশে কিংবা মিয়ানমারের ভেতরে বসে নানা ধরণের সাইবার অপরাধ, মাদক, মানব-পাচারের সাথে জড়িত। বিষয়টি চীনের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও মিয়ানমার জান্তা সেটি দমনের কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

টম কিন মনে করেন, “চীনের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের শান প্রদেশে অস্ত্র-বিরতির জন্য চীন চেষ্টা করলেও রাখাইনে অস্ত্র বিরতি নিয়ে তাদের তেমন কোন তৎপরতা নেই।

পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এই সংঘাত কিভাবে শেষ হবে তার কোন সুস্পষ্ট নিশানা দেখা যাচ্ছে না। গত তিন বছরে এসব গোষ্ঠী মিয়ানমারে ৩০০’র বেশি সামরিক চৌঁকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার কি ভেঙ্গে পড়ার হুমকিতে আছে? প্রভাবশালী দেশ চীন এখানে কী ভূমিকা রাখছে? মিয়ানমারের উপর একটা সময় চীনের বেশ প্রভাব ছিল। কিন্তু সে প্রভাব এখন অনেকটাই খর্ব হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার হুমকির মুখে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের মুখে তারা সহসা ভেঙ্গে পড়বে কী না। সংঘাত যেভাবে চলছে এবং সেনাবাহিনীর যে শক্তি আছে তাতে মনে হচ্ছে এটার সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সেনাবাহিনীর পরাজয় হতেও পারে। তবে, সেটা কতদিন লাগবে কিংবা সেটা কীভাবে হবে তা বলা কঠিন।

মিয়ানমারে এখন যে পরিস্থিতি সেটিকে নজিরবিহীন বলে বর্ণনা করছেন ব্রাসেলাস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টম কিন। তিনি বলেন, সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।

“কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মিয়ানমার জান্তা সরকার ভেঙ্গে পড়ার হুমকিতে আছে। এই সংঘাত মূলত রাখাইনে ও শান প্রদেশে সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে। দেশের ভেতরের দিকে এখনো ছড়ায়নি।”

এটা নিশ্চিতভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরো জটিল করবে। রাখাইনে সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হবে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। আরাকান আর্মি রাখাইনে একটি রাজনৈতিক শক্তি। রোহিঙ্গারা যেসব এলাকায় বসবাস করতো এবং এখনো যেসব এলাকায় তারা বসবাস করে সেখানে আরাকান আর্মি তাদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছে।

একটা যুদ্ধবিরতি হলেও সেটি টেকসই হবেনা বলে মনে করেন টম কিন। অস্ত্র-বিরতি হলেও সংঘাত যে কোন সময় শুরু হবে। যেখানে একটা সংঘাতেময় পরিবেশ থাকবে, সেখানে গিয়ে রোহিঙ্গারা নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না।

“আরাকান আর্মির সাথে আলোচনা না করে সেখানে রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফেরত পাঠানো যাবে?” প্রশ্ন তোলেন টম কিন। যদিও রোহিঙ্গাদের প্রতি আরাকান আর্মির দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। তারা রোহিঙ্গাদের শত্রু মনে করেনা।

তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিকে সতর্কতার সাথে দেখতে হবে বাংলাদেশকে।

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ