পাঞ্জাবের যে কোটারি পাকিস্তান শাসন করছিল, তারা জানে, পূর্ব বাংলার এই ভদ্রলোকদের যতদিন ব্যবহার করা দরকার ছিল, করে ফেলেছে।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৩৫
সেপ্টেম্বর মাসে গণপরিষদে আইন পাস করে মোহাম্মদ আলী গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার এক মাস পরে, ২৩ অক্টোবর ১৯৫৪ সালে গোলাম মোহাম্মদ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে গণপরিষদ ভেঙে দিলেন। গণপরিষদ ছিল সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই গণপরিষদের সদস্যরা ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত দেশে কোনো শাসনতন্ত্র ইচ্ছা করেই দেন নাই। গণপরিষদ একদিকে শাসনতন্ত্র তৈরি করার অধিকারী, অন্যদিকে জাতীয় পরিষদ হিসাবে দেশের আইন পাস করারও অধিকারী। ভারত ও পাকিস্তান একই সঙ্গে স্বাধীন হয়। একই সময় দুই দেশে গণপরিষদ গঠন হয়। ভারত ১৯৫২ সালে শাসনতন্ত্র তৈরি করে দেশজুড়ে প্রথম সাধারণ নির্বাচন দেয়। আবার জাতীয় নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে।
আমাদের গণপরিষদের কতক সদস্য কিছু একটা কোটারির সৃষ্টি করে রাজত্ব কায়েম করে নিয়েছে। পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক নির্বাচনে পরাজিত হয়েও এদের ঘুম ভাঙল না। এরা ষড়যন্ত্র করে পূর্ব বাংলার নির্বাচনকে বানচাল করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করল। মোহাম্মদ আলী জানতেন তাঁর সাথে আর্মি নাই, আর থাকতেও পারে না। গোলাম মোহাম্মদকেই আর্মি সমর্থন করবে। তবুও এত বড় ঝুঁকি নিতে সাহস পেলেন কোথা থেকে? নিশ্চয়ই অদৃশ্য শক্তিই তাঁকে সাহস দিয়েছিল।
পাঞ্জাবের যে কোটারি পাকিস্তান শাসন করছিল, তারা জানে, পূর্ব বাংলার এই ভদ্রলোকদের যতদিন ব্যবহার করা দরকার ছিল, করে ফেলেছে। এদের কাছ থেকে আর কিছু পাওয়ার নাই। আর এরাও পূর্ব বাংলার জনমতের চাপে মাঝে মাঝে বাধা সৃষ্টি করতে শুরু করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানীরা যুক্তফ্রন্টের জয়ের পরে এদের অবস্থাও বুঝতে পেরেছে। এরা যে পূর্ব বাংলার লোকের প্রতিনিধি নয় তাও জানা হয়ে গেছে।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৭৮।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৩৪