24 C
আবহাওয়া
১০:৫০ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » হাসিনার পতনের এক মাস, যেসব পরিবর্তন ঘটেছে

হাসিনার পতনের এক মাস, যেসব পরিবর্তন ঘটেছে

HASINA

বিএনএ ডেস্ক: গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।

নতুন এই সরকারের হাতে গত এক মাসে প্রশাসনের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদলের ঘটনা ঘটেছে, যা এখনো চলছে কার্যক্রম। সেইসঙ্গে, দেশের আর্থিকখাতসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে সংস্কার উদ্যোগ।

স্থানীয় জনপ্রতিধিদের অপসারণ করে তাদের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক। ব্যাংকখাত সংস্কারে সিদ্ধান্ত হয়েছে আলাদা কমিশন গঠনের। সেইসঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, অনিয়ম-জালিয়াতির ঋণ ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার।

পুলিশের থানায় ফেরা
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন এলাকার বহু থানায় নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় সারা দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে অন্তত ৪৫০টি ‘আক্রান্ত’ হয়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। ভাঙচুর করে থানা জ্বালিয়ে দেওয়া, অস্ত্র ও মালামাল লুট, এমনকী পুলিশ হত্যার ঘটনাও তখন ঘটতে দেখা গেছে। সরকার পতনের আগে-পরে সহিংসতায় সারা দেশে পুলিশের কমপক্ষে ৪৪ জন সদস্য নিহত হন বলে জানান কর্মকর্তারা।

প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল
গত এক মাসে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদল হতে দেখা গেছে। বিশেষতঃ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর। স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ করা হয়েছে কয়েকশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। অনেকেই হয়েছেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওএসডি)। বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগ আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই বাদ পড়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্বে থাকা তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করা মাসুদ বিন মোমেন।

বিচার বিভাগে বড় পরিবর্তন
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিচার বিভাগেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ১০ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরাও তার সঙ্গে পদত্যাগ করেন।

এ ঘটনার পর নতুন বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন আপিল বিভাগের বিচারক সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একইভাবে, আপিল বিভাগে নতুন আরও চার বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

আসাদুজ্জামান বিএনপির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ফলে দলীয় বিবেচনায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি-না, সে প্রশ্নও উঠতে দেখা যাচ্ছে।

পদত্যাগের হিড়িক
শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারি, আধা-সরকারি, এমনকী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ছেন, আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, অপমান-অপদস্তসহ নানান চাপের মুখে কর্তা ব্যক্তিরা পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত চার সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ শীর্ষ পদের ব্যক্তিরা দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিগগিরই নতুন উপাচার্য নিয়োগ হবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এদিকে, বৃহস্পতিবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

বন্দি থেকে মুক্তি
মুক্তি দেওয়া হয়েছে কোটা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলাকালে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের।

কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন গত দেড় দশকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ও কারাবন্দি বিএনপি, জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মী, যাদের মধ্যে ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন গিয়াস উদ্দিন আল মামুনও রয়েছেন।

এছাড়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দীন রাহমানী এবং হত্যা মামলার আলোচিত আসামি শেখ আসলাম, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়।

শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা
দুর্নীতি, হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানান অভিযোগ থাকার পরও গত দেড় দশকে যাদের বিরুদ্ধে সেভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, আগের সরকারের সেইসব ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখন মামলা হতে দেখা যাচ্ছে।

এর মধ্যে ইতোমধ্যেই শতাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যেগুলোর বেশিরভাগই হত্যা মামলা।

একইভাবে আসামি হয়েছেন সজীব ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, শেখ রেহানাসহ আওয়ামী লীগ সভাপতির পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের অনেকে।

সেইসঙ্গে, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধে মামলা হতে দেখা গেছে।

বিভিন্ন মামলায় ইতোমধ্যেই আনিসুল হক, টিপু মুনশি, দীপু মণি, সালমান এফ রহমান, জুনাইদ আহমদ পলকসহ অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। আদালতে নেওয়ার সময় তাদের অনেকের উপর হামলাও হয়েছে।

বাতিল করা হয়েছে শেখ হাসিনাসহ আগের সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট।

গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন
আওয়ামী লীগ আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেরই খোঁজ মিলছে সরকার পরিবর্তনের পর।

আগের সরকারের নির্দেশেই বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে তুলে নিয়ে বছরের পর পর আটকে রেখেছিলেন বলে ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় জানা যাচ্ছে।

তেমনই একজন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর প্রয়াত গোলাম আজমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। ২০১৬ সালের ২৩শে আগস্ট গুম হওয়ার আট বছর পরে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন তিনি।

একইভাবে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল ‘ইউপিডিএফ’র সংগঠক মাইকেল চাকমা।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান
ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি কোন কাজে যেন আর দুর্নীতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সেবা সহজ করার মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বুধবার সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস।

দুর্নীতির অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আর্থিক খাত সংস্কারে উদ্যোগ
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংকিংখাতে ‘নজিরবিহীন লুটপাট’ হয়েছে জানিয়ে এ খাতকে স্থিতিশীল করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার।

ব্যাংকিং খাতের টেকসই সংস্কারে ইতোমধ্যেই আলাদা ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খুব শিগগিরই কমিশন গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া ‘লুটপাটে’র শিকার হওয়া বেশ কিছু ব্যাংকের আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেসরকারিখাতে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে।

শিক্ষাখাতে পরিবর্তন
সরকার পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার মুখে গত ১৮ জুলাই মাঝপথে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সরকার পতনের পর সিদ্ধান্ত হয় বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে ১১ সেপ্টেম্বরের পর।

এটা জানার পর পরীক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র একটি দল সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে গত ২০ আগস্ট এইচএসসি’র বাকি বিষয়ের পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়।

ফলাফল কীভাবে হিসাব করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্টকরে কিছু বলা হয়নি। এ অবস্থায় এবার এইচএসসিতে ‘অটোপাস’ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন।

জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় প্রশাসক
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যূতির পর মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

পট পরিবর্তনের পর সরকার সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে কিংবা পরিষদে না যাওয়ায় নাগরিক সেবা ব্যাহতের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

স্থানীয় সরকারের ওই চারটি প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি সরকারের।

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সক্রিয় জামায়াত
ক্ষমতা হারানোর চারদিন আগে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ নম্বর ধারায় ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ ও তাদের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্রশিবির’কে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

কিন্তু নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার তৃতীয় সপ্তাহে এসে সিদ্ধান্ত বদলে গেছে। বাতিল করা হয়েছে আগের প্রজ্ঞাপন। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সারা দেশের পাড়া-মহল্লায় তাদেরকে জনসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে।

১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেওয়ার পর গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুদিন ১৫ আগস্টে সারাদেশে ব্যাপক আয়োজনে শোকদিবস পালিত হতে দেখা গেছে। জাতীয় দিবস হিসেবে ওইদিন সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেটিও বদলে গেছে।

নানা দাবিতে বিক্ষোভ-ঘেরাও
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরবর্তী প্রায় তিন সপ্তাহজুড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নানা দাবিতে একের পর এক বিক্ষোভ-আন্দোলন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Loading


শিরোনাম বিএনএ