21 C
আবহাওয়া
৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দেশজুড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত, নিহত বেড়ে ৯৭

দেশজুড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত, নিহত বেড়ে ৯৭

dead

বিএনএ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ২০ জেলায় ১৪ পুলিশ সদস্য, এক সাংবাদিকসহ অন্তত ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্য ও এক সাংবাদিকসহ ২৩ জন, ঢাকায় ১০ জন, যার মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী; লক্ষ্মীপুরে ১০ জন, ফেনীতে আটজন, নরসিংদীতে ছয়জন, সিলেটে পাঁচজন, মাগুরা, কিশোরগঞ্জ, রংপুর ও বগুড়ায় চারজন করে; মুন্সীগঞ্জ, শেরপুর, পাবনা ও কুমিল্লায় তিনজন করে; জয়পুরহাটে দুজন এবং ভোলা, গাজীপুরের শ্রীপুর, বরিশাল, কক্সবাজার ও হবিগঞ্জে একজন করে নিহত হন।

গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ২২ জন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং তিনজন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার আন্দোলনকারীরা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফরমের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আসার আহবান জানান।

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে সড়কে অবস্থান নেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। এক পর্যায়ে তাদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

এ সময় শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মিডিয়া হাউসেও হামলা করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চারজনের লাশ নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সহিংসতা এড়াতে আবার বন্ধ করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

সরকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য আলোচনার দ্বারও খোলা রেখেছে। চলমান এমন পরিস্থিতিতে গতকাল গণভবনে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বৈঠক শেষে নাশকতাকারীদের শক্ত হাতে দমন করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘এখন যারা নাশকতা করছে, তারা কেউই ছাত্র নয়। তারা সন্ত্রাসী। এই সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’

জাতীয় সংসদ ভবনের টানেলে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলা করতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে বিশৃঙ্খলা করলে রাজনৈতিকভাবে শক্ত হাতে দমন করা হবে। সন্ত্রাস দমনে আইনের প্রয়োগ করা হবে।’

ঢাকায় তিন শিক্ষার্থীসহ নিহত ১০

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে ধানমণ্ডি থানার জিগাতলায় সংঘর্ষে নিহত হন আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ফার্মগেট এলাকায় তাহেদুল ইসলাম নামে (২২) একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি মহাখালী ডিওএইচএস পরিষদের ডি-৮ কনসালট্যান্টের জুনিয়র অফিস সহকারী হিসেবে পার্টটাইম চাকরি করতেন। তাহেদুল কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে অনার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

উত্তরায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারুল ইসলাম (প্রকৌশলী)। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন বলে জানান ওই এলাকার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।

কারওয়ান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির রমিজ উদ্দিন (২৪) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যার দিকে ঢামেকে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের গ্রামের বাড়ি রংপুরে।

গতকাল বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লা বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

সন্ধ্যার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় আরেক যুবকের (২৫) মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেখে গেছেন কয়েকজন। তবে কোথা থেকে তাঁকে আনা হয়েছে এবং কিভাবে মৃত্যু হয়েছে, জানাতে পারেননি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সাভারে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর। তাঁর পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানান ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদুল হক। ধামরাইয়ে গুলিবিদ্ধ যুবক বিপ্লব (৩০) ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে মারা গেছেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হন ইশতিয়াক আহমেদ ইফতি (৩৫)। তিনি কালিন্দী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে মিরাজ হোসেন (২২) নামের এক বাসচালকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মিরাজের ভগ্নিপতি ফেরদাউস আলম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

শ্রীপুরে শ্রমিক নিহত

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনবাজার এলাকায় গতকাল রাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নির্মাণ শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেন (২২) নিহত হন। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাটি গ্রামে। তিনি শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামে সপরিবার ভাড়া থাকতেন।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ

কর্মসূচি পালনে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সড়কে অবস্থান নেন। তাঁদের মধ্যে রাজধানীর প্রায় সর্বত্র দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। এ ছাড়া লাঠিসোঁটা ব্যবহার এবং ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়।

রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাব মোড়, পরিবাগ, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বেইলি রোড, কুড়িল, বাড্ডা, ধানমণ্ডি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, বাংলামোটর, ইসিবি চত্ব্বর, মিরপুর-১০, মিরপুর-২, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পল্টন, প্রেস ক্লাবের সামনে, উত্তরা ও পুরান ঢাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টা থেকে জড়ো হতে দেখা যায়। লাঠিসোঁটা হাতে সড়ক অবরোধ করে তাঁরা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে।

পল্টন-প্রেস ক্লাব-সচিবালয় এলাকায় ধাওয়া-পালটাধাওয়া

রাজধানীর পল্টন ও প্রেস ক্লাব এলাকায় দফায় দফায় মিছিল করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয়।

সকাল ১০টা থেকে পুরানা পল্টন, শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আসতে শুরু করেন বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাঁরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর সমাবেশ কর্মসূচি চলতে থাকে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পেছনের রাস্তায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। হাইকোর্টের গেটে অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থানকারী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় প্রেস ক্লাব পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও ছররা গুলি করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলকারীরা পুরানা পল্টন মোড়ে ও আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয়। সংঘর্ষে কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। পুলিশের ছররা গুলিতে দৈনিক আমাদের সময়ের ফটো জার্নালিস্ট মেহরাজ ও সিনিয়র ফটো জার্নালিস্ট পিপলু আহত হন।

সায়েন্স ল্যাবে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ

সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ‘অসহযোগ আন্দোলন’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে আসতে থাকেন এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়।

মিরপুর-১০-এ নেই পুলিশের উপস্থিতি

মিরপুর-১০ নম্বরেও দিনব্যাপী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার সংঘর্ষে ১০ নম্বর গোলচত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুরে ত্রিমুখী সংঘর্ষ

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকেল থেকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের কাঁদানো গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ বক্সে আগুন দেয়।

সিরাজগঞ্জ রণক্ষেত্র, ১৩ পুলিশ সদস্যসহ নিহত ২৩

গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিরাজগঞ্জ। শহরের সব রুট দখলে নিয়েছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা’। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষ ও মারধরে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। নিহত অন্যদের মধ্যে ছয়জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, তিনজন বিএনপির নেতাকর্মী এবং একজন সাংবাদিক। সকাল ১০টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে এনায়েতপুর থানায় আন্দোলনকারীদের হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হন।

নিহতরা হলেন রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), রায়গঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন (৩৯), রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার রিপন (৪০) ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাত টিটু, দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিক (৫০), সিরাজগঞ্জ শহর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু খান (৩৯), যুবদলকর্মী আব্দুল লতিফ (২৫) ও ছাত্রদলকর্মী সুমন শেখ (২৫)। তবে নিহত পুলিশ সদস্যদের নাম পাওয়া যায়নি।

অবশ্য পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রাজশাহী বিভাগীয় অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক জানিয়েছিলেন, এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনায় ১১ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

সূত্র জানায়, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ভেতরে সকালে নেতাকর্মীরা মতবিনিময়সভা করছিলেন। একই সময় কার্যালয়ের সামনের মোড়ে জমায়েত হয় আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে তারা আওয়ামী লীগ অফিস ও পাশের রায়গঞ্জ প্রেস ক্লাবে হামলা চালায়। এ সময় পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ৪০-৫০ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করা হয়।

মাধবদীতে নিহত ছয়জনই আ. লীগের নেতাকর্মী-সমর্থক

নরসিংদীর মাধবদীতে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গতকাল দুপুরে মাধবদী বাজার মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শহীদুল ইসলাম সোহাগ।

নিহতরা হলেন সদর উপজেলার চরদিঘলদী ইউপি চেয়ারম্যান ও মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৩৭), সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান ভূইয়া (৪৮), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই ছোট গদাইচর এলাকার আবু সায়ীদের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দেলু (৪৮), মাধবদীর আলগী এলাকার আওয়ামী লীগের সমর্থক শাহাজাহান মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া (৪৫), মাধবদী শ্রমিক লীগ নেতা আনিসুর রহমান সোহেল (৪৩) ও অজ্ঞাতপরিচয় একজন (৪০)।

ফেনীতে সংঘর্ষে আটজন নিহত

ফেনীতে সংঘর্ষে আটজন নিহত এবং সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে মহিপালে মহাসড়কে আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাংবাদিকসহ ৪৫ থেকে ৫০ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে তিনজন আন্দোলনের কর্মী বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা হলেন ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, ফেনী সদরের দক্ষিণ কাশিমপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. শিহাব ও ফেনী সদরের ফাজিলপুরের কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম।

মাগুরায় নিহত চার

মাগুরা সদর ও মহম্মদপুর উপজেলায় সকালে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারী ও বিএনপির সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত ও পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৫), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে সুমন শেখ (১৯), একই উপজেলা সদরের ইউনুস মিয়ার ছেলে আহাদ (১৮) এবং শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাসের ছাত্র মোহাম্মদ ফরহাদ (২২)।

সিলেটে পাঁচজন নিহত

‘অসহযোগ আন্দোলনে’ সিলেট নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত এবং শিশু, পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হন। তাঁরা হলেন উপজেলার বারকুট গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩), উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮), নিশ্চিন্ত গ্রামের নাজমুল ইসলাম, মিনহাজ (২২) ও গৌজ (৪৪)।

দুজন নিহতের খবর নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদর্শন সেন।

শেরপুরে তিন বিক্ষোভকারী নিহত, শতাধিক আহত

শেরপুর শহরের খরমপুর-তিনানী বাজারে রাস্তায় বিকেলে ছাত্রলীগ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল গাড়িবহরের চাপায় দুজন ও গুলিতে একজন নিহত হন বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার চৈতনখিলা গ্রামের মাহবুব হোসেন (৩২) এবং অন্য দুজনের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

কিশোরগঞ্জে নিহত চার

কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসায় আগুন দিলে অঞ্জনা বেগম (৩২) নামের এক নারী ও তাঁর কন্যাশিশু (৭) পুড়ে মারা যায়। এই নেতার বাড়ির পাশে যুবলীগকর্মী মবিনকে (৩৮) হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে রবেল আব্দুল্লাহ (৫০) নামের এক ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

জয়পুরহাটে যুবলীগ নেতাসহ দুজন নিহত

জয়পুরহাটে দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের হামলায় একজন এবং পরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন যুবলীগ নেতা রফিকুজ্জামান রহিম (৫২) ও মেহেদী হাসান (১৭) নামে এক তরুণ। মেহেদীর বাড়ি পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের হামলায় সেখানে থাকা এমপি (জয়পুরহাট-১) শামসুল আলম দুদুসহ ১৫ থেকে ২০ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এরপর হামলাকারীরা কার্যালয়ে তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের ছবি তুলতে গেলে হামলাকারীরা একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি শফিকুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে।

মুন্সীগঞ্জে নিহত তিন, আহত ১১৫

মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেটের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য চত্বরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় তিন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এবং অন্তত ১১৫ জন আহত হয়েছে।

হবিগঞ্জে আ. লীগ কর্মী খুন, আহত শতাধিক

হবিগঞ্জ শহরের টাউন হল রোড এলাকায় আন্দোলনকারীদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী রিপন শীল (২৭) নিহত হয়েছেন। তিনি হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুরের রতন শীলের ছেলে। সেখানে হামলা ও সংঘর্ষে আহত শতাধিক মানুষ।

বরিশালে আ. লীগ নেতাকে হত্যা, প্রতিমন্ত্রীর বাসায় হামলা

বরিশালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। নিহত টুটুল চৌধুরী (৬০) বরিশাল মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

ভাঙচুর করা হয়েছে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবন, দুদক অফিস, শিশু পার্ক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। অ্যাম্বুল্যান্সসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শতাধিক মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।

কুমিল্লায় পুলিশসহ নিহত তিন

কুমিল্লার দেবীদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় তিনজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১১ জন গুলিবিদ্ধ। নিহত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩) প্রান্তিক বাস সার্ভিসের চালক ছিলেন। দুপুরে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার কনস্টেবল মো. এরশাদ আলীকে আন্দোলনকারীরা থানায় পিটিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া কোটবাড়িতে এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন আলম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভোলায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, নিহত এক

ভোলায় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং ২০ থেকে ৩০ জন আহত হয়েছে। নিহত জসিম উদ্দিন (৪০) পৌর এলাকার নবীপুরের আবু তাহেরের ছেলে ও নতুনবাজারের ব্যবসায়ী। আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়, ভাঙচুর করে।

বগুড়ার সাতমাথা রণক্ষেত্র, নিহত চার

বগুড়ায় ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচি ঘিরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে চারজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা বগুড়া টিঅ্যান্ডটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষ, নিহত ১০

লক্ষ্মীপুরে গতকাল দিনে ও রাতে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শহরের তজিম মার্কেট এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সালাহউদ্দিন টিপুর বাসার সামনে পিটিয়ে ও কুপিয়ে সাতজনকে হত্যা করে আন্দোলনকারীরা। এর আগে আন্দোলনকারীরা টিপুর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন বাসাটি থেকে লোকজন বের হলে তাদের হত্যা করে আন্দোলনকারীরা। নিহত ১০ জনের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ওসমান গনি, কাওসার, সাদ-আল আফনাল, আহমেদ শরীফ, রিয়াজ চৌধুরী, হারুন মেম্বার ও অজ্ঞাতপরিচয় দুজন।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার রাত সাড়ে ১২টায় ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চেয়ারম্যান টিপুর বাসভবনে আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও পুলিশ। বাসার ভেতরে কেউ আটকা পড়েছেন কি না বা কারো মরদেহ আছে কি না উদ্ধারকাজ শেষে জানা যাবে।

রংপুরে নিহত চার

রংপুরে সকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খাইরুল ইসলাম সবুজ ওরফে খুশবু, শ্যামল চন্দ্র (২৯) ও মাসুম (৩৫)। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের ডা. অধ্যাপক আনোয়ারুল হাসান।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ