29 C
আবহাওয়া
৭:৫২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৯ (ময়মনসিংহ-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৯ (ময়মনসিংহ-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ময়মনসিংহ-৪ আসনের হালচাল।

YouTube player

ময়মনসিংহ-৪ আসন 

ময়মনসিংহ-৪ সংসদীয় আসনটি ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৪৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ কে এম ফজলুল হক বিজয়ী হন 

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬২ হাজার ৫শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ২৭ হাজার ৩ শত ১৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির এ কে এম ফজলুল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৮ শত ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৪শত ৫৪ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির একে এম ফজলুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির একে এম ফজলুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২হাজার ২শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৯৭ হাজার ৯ শত ২০জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙল প্রতীকে তিনি পান ৭২ হাজার ১শত ৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আমির আহমেদ চৌধুরী নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৮ শত ৩১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির দেলোয়ার হোসেন খান দুলু বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ১ শত ৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির দেলোয়ার হোসেন খান দুলু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৩ শত ৮০ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭ শত ২৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬ শত ২৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫ শত ৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এ কে এম মোশারফ হোসেন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৫ শত ৪১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ বিজয়ী হন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন ।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ৭০ হাজার ৪ শত ৭৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবু ওহাব আকন্দ,লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির এমদাদুল হক মিল্লাত, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির হামিদুল ইসলাম ,হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের নাসির উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙল প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪শত ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোঃ আবু ওয়াহাব আকন্দ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৯ শত ৫০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি , নবম সংসদে আওয়ামী লীগ, সপ্তম, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ময়মনসিংহ-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৮.৫০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩.৯২%, বিএনপি ৩৫.২২%, জাতীয় পাটি ২১.৫৩%, , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৯.৩৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.৪৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.২৪%, বিএনপি ২৮.২১% জাতীয় পাটি ৩৬.৪৪%, জামায়াত ইসলামী ২.১২ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৯৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৩২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৩৩ %, ৪ দলীয় জোট ৩৮.৩৪%, জাতীয় পার্টি ১৮.৫২%স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.৮১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৭৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৪.৬৬ %, ৪দলীয় জোট ৩২.১৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.১৫% ভোট পায়।

ময়মনসিংহ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির জোট হলে রওশন এরশাদের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। বার্ধক্যজানিত কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালে সে ক্ষেত্রে তার ছেলে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত-উর রহমান শান্ত মনোনয়ন চাইবেন।

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মননোনয়ন চাইবেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ময়মনসিহং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ও ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, শিল্পপতি ও সমাজসেবক আমিনুল হক শামীম।

ময়মনসিংহ সদর আসনে বিএনপির শক্তিশালী একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে মনোনয়ন চাইবেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ময়মনসিংহ জেলার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-৪। এটি একক কোন দলের ঘাঁটি নয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দেশের প্রধান এ তিন দলেরই প্রার্থী জিতেছেন এ আসনে।

একসময় সদর আসনে জাতীয় পার্টি ভোটের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। তবে সময়ের স্রোতে দলটির রাজনীতিতে ভাটার টান পড়েছে। রওশন এরশাদ নিজ এলাকায়ও সমাদৃত ও সম্মানিত হলেও এলাকায় যাতায়াত ও জনগণের সঙ্গেও যোগাযোগ কম। তবে ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ার পেছনেও রওশন এরশাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকায় ভোটের রাজনীতিতে তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। এরপরও জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করলে বর্তমান অবস্থায় আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিকে ডিঙিয়ে রওশন এরশাদের বিজয় খুবই কঠিন হবে।

এ আসনে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং তার পরিবার আওয়ামী লীগের বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। দলে নিরব কোন্দল রয়েছে। বিএনপি এই আসনে সু সংগঠিত নয়। তবে ভোট ব্যাংক রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৪৯ তম সংসদীয় আসনটিতে কে জিতবে তা নির্ভর করছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহেনা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ