বিএনএ, কুবি : অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা কর্মী সংকট, বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ নানা সমস্যা জর্জরিত আবাসিক হলগুলো। হল প্রশাসনের উদাসীনতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্রদের দীর্ঘদিন ধরে পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা প্রভোস্টকে জানালেও সমাধান পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা যায়, হলের চারপাশে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, একাধিক ওয়াশরুমের কল নষ্ট, দরজা ভাঙ্গা, দরজার ছিটকিনি নেই, বেসিন ভাঙ্গা, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সার্কিট, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ড্রেনে জমে আছে দুর্গন্ধযুক্ত পানি, ময়লা। এছাড়া ছাত্রদের হলে অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগতরা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্প্রসারিত অংশের গেইটে নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগতরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা জানান, নানা অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও হল প্রশাসনের উদাসীনতায় কমছে না দুর্ভোগ।
এ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, হল একটা পরিবারের মত যেখানে বসবাসের একটা পরিবেশ না থাকলে শিক্ষার্থীরা শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। হলের বেশিরভাগ ওয়াশরুমের দরজার ছিটকানি নাই, লাইট নাই, পানির কল নাই কোথাও কোথাও, বেসিন নাই, ওয়াশরুমে বেসিন থাকলেও নেই আয়না নাই । এছাড়া আমাদের হলের দুই ব্লকের ওয়াশরুমের গোসালখানায় পানি পড়ে। এবিষয়ে আমরা হল প্রাধ্যক্ষের সাথে বসছি তবে এখনো কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের হলে শুধু ওয়াশরুমের সমস্যা নয়, পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। এছাড়া ওয়াশরুমগুলোর অবস্থাও ভাল না। বাথরুমের পাশের রুমগুলোতে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা যার কারণে থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আমাদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী খাইরুল বাশার সাকিব জানান, আমাদের হলে বিভিন্ন ফ্লোরে বেসিন, টয়লেট, ফ্ল্যাশ ও বাথরুমের শাওয়ার ইত্যাদি সংস্কার করা খুবই জরুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, অধিকাংশ টয়লেটের বদনা ভাঙ্গা, প্রায় ওয়াশরুমের ঝর্ণা থাকলেও ট্যাপ নষ্ট আবার ট্যাপ থাকলেও ঝর্ণা নাই। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বসবাস খুবই অনুপযোগী। যা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটায়।
হলের এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, কোথায় কোথায় সমস্যা আছে আমরা লিস্ট নিয়েছি। এবিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরে চাহিদা দিয়েছি। আশা করি এক মাসের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের পানির যে সমস্যা সেটা ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের সাথে কথা হয়েছে। দত্ত হলের পশ্চিম পাশে যে ব্যবস্থাটা করা হয়েছে, পূর্ব-দক্ষিণ পাশেও আমরা একইভাবে ব্যবস্থা করতেছি। যে পানি ফ্লোরে আসে তা পাইপটা জ্যাম হয়ে চলে আসে, এসব সমস্যার বিষয়ে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরে আবেদন করেছি। খুবই শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, হলের যে সমস্যা তা নিয়ে প্রভোস্টের সাথে আমি আলাপ করে দেখব।
শিক্ষার্থীদের সমস্যায় হল প্রভোস্টরা উদাসীন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খুবই খারাপ কথা। আমি হল প্রভোস্টদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করবো, আসলে এরকম কেন? অবশ্যই এসব বিষয় সমাধান হয়ে যাবে।
বিএনএ/ হাবিবুর রহমান হাবিব , ওজি