।।মীম ওসমান।।
বছর ঘুরে আবার এলো দশই মহররম। কাল পবিত্র আশুরা। এ দিন সত্য ও ন্যায়ের নিশান উর্ধ্বে রাখতে কারবালা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন প্রিয় নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা ।
কারবালা ইরাকের বাগদাদ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ময়দানের নাম। ৬১ হিজরির ১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরে সংঘটিত হয় ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে হজরত হোসাইন (রা.) ও তার পরিবার-পরিজনসহ প্রায় ৭২ জন শাহাদাত বরণ করেন। তার একমাত্র জীবিত পুত্র হজরত জয়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া কেউই সেদিন বাঁচতে পারেনি।
কারবালা যুদ্ধের অন্যতম কারণ হলো ইয়াজিদের অবৈধ মনোনয়ন। আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) নিজের পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকার ঘোষণা করলে অনেক সাহাবি ও তাবেয়ি এর বিরোধিতা করেন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। ইয়াজিদের চরিত্র, জীবনাচার ও শাসননীতি ইসলামের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থি হওয়ায় ইমাম হোসাইন (রা.) তার প্রতি আনুগত্য অস্বীকার করেন এবং খেলাফতের রক্ষায় তৎপর হন।
তখন ইমাম হোসাইন (রা.) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশে রওনা করেন। এর পেছনে ছিল কুফাবাসীর আহ্বান। কুফাবাসীরা ইয়াজিদের শাসনের বিরুদ্ধে হজরত হোসাইন (রা.)-কে নেতা হিসেবে আহ্বান জানায়। তবে পরে তারা ভীত হয়ে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। পথিমধ্যে ইয়াজিদ হোসাইন (রা.)-কে আটকে ফেলার নির্দেশ দেয়। কারবালা নামক স্থানে হোসাইন (রা.)-এর বাহিনীকে অবরোধ করা হয়। তখন হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীকে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এক. তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেওয়া হোক। দুই. সীমান্তে গিয়ে জীবনযাপন করতে দেওয়া হোক। তিন. এ দুটোর একটিও না হলে ইয়াজিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু নিষ্ঠুর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান থেকে এক চুল সরে আসেনি।
ঐতিহাসিকরা লেখেন, ১০ মহররম ফজরের নামাজের পর ইয়াজিদের চার হাজার সৈন্য হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারকে পানি সরবরাহ বন্ধ রেখে ঘিরে ফেলে। এ দিন দুপুর পর্যন্ত এক অসম যুদ্ধ চলে। হোসাইন (রা.) একে একে তার পরিবার ও সহচরদের শাহাদাত প্রত্যক্ষ করেন। শেষে তিনি নিজেও শাহাদাত বরণ করেন।
তার শাহাদাত এতটাই নির্মম ছিল যে, শরীরে ৩৩টি বর্শা, ৩৪টি তরবারির আঘাত এবং অসংখ্য তীরের ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়। হত্যাকারী ছিল সিনান ইবনে আনাস নাখায়ি এবং সহযোগী হিসেবে ছিল খাওলি ইবনে ইয়াজিদ। তার মস্তক কেটে দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে পাঠানো হয়।
বিএনএ/ ওজি