বিএনএ, মিসরাই : চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা হাসপাতালের ( মস্তাননগর হাসপাতাল) দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও হাত বদল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মাদক সেবন এতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে হাসপাতাল এলাকায় ফেন্সিডিলের বোতলের ভাগাড় তৈরি হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত মদপান করার পর মাতাল ব্যক্তির পাশে যেমন মদের বোত পড়ে থাকে, ঠিক তেমনি মস্তানগর হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে ফেন্সিডিলের বোতল পড়ে আছে সারি সারি।
এমন দৃশ্য চোখে পড়ে সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে। পেন্সিডিলের বোতল গুলি দেখলে যেন মনে হয় হাসপাতালটাই এসব বোতলের মাদক সেবন করে ফেলে রেখেছে পাশে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন, হাসপাতালের একাদিক কর্মচারী এসব মাদক সেবন করে হাসপাতালের জানালার পাশে ফেলে দিয়েছে। তাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত ফেন্সিডিলের বোতলগুলো জমতে জমতে হাসপাতাল এলাকায় ফেন্সিডিলের বোতলের ভাগাড় তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে খোদ হাসপাতালের দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে। যারা দাপ্তরিক কাজের ফাকে মাদক সেবন করে জানালার পাশেই মাদকের বোতল ফেলে রাখে।
অভিযুক্তরা হলেন-মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স এর প্রধান হিসাব রক্ষক মাহবুব ও এমএসিএমও (উপসহকারী কমিউনিটি ম্যাডিকেল অফিসার) লুৎফুর রহমান।
অভিযোগ আছে হাসপাতালের এ দুই কর্মচারী স্থানিয় একাদিক ব্যাক্তির সহায়তায় করের হাটের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক সংগ্রহ করে সেবন করেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। হাসপাতাল কর্মচারীরা একাদিক বার প্রধান কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাদিক বার তাদের শাসানো হয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। তারপরও তাদের আচরনে পরিবর্তন আসেনি। প্রধান কর্মকর্তাদের বদলি হলেও তারা থেকে যায় বহাল তবিয়তে।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক একাধিক হাসপাতাল কর্মচারী-কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালের উত্তর পূর্ব পাশের ভাঙ্গা দেয়ালটি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে প্রায় লাগানো। রাতের অন্ধকারে এই দেয়ালের বাহিরের অংশ হতে প্রধান হিসাবরক্ষক মাহবুব এর নিকট মাদক দ্রব্য পৌছায় কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী। উপযুক্ত সীমানা প্রাচীর থাকলে এহেন ঘটনা ঘটতো না বলে মনে করেন হাসপাতালের অন্য কর্মচারীরা।
তারা জানান, মাহবুব মাদক সেবন ছাড়াও, ইয়াবা হাত বদল করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করছেন। হাসপাতাল সংলগ্ন দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের সহিত বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে আরো অধিক তথ্য পাবেন। সে ইতি পূর্বেও মাদক কারবারের জন্য পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল।
স্থানিয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত দুই মাদক সেবির সাথে স্থানিয় একাধিক মাদক কারবারির অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে। স্থানিয় এসব মাদক কারবারীরাই হাসপাতালে গোপনে মাদক সরবরাহ করে। হাসপাতারের প্রধান হিসাব কর্মকর্ত অনেক সময় রাতের বেলায় সকলের অগোচরে অফিস কক্ষে অবস্থান করে মাদক সেবন করেন। স্থানিয়দের দাবি হাসপাতাল এমএসিএমও (উপসহকারী কমিউনিটি ম্যাডিকেল অফিসার) লুৎফর ও হিসাব কর্মকর্তার শরীরে মাদক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হোক। অন্যথায় তাদের কারনে হাসপাতাল এলাকায় মাদকের ভয়াবহতা আরো ভয়ঙ্কর ভাবে বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মিনহাজুর রহমান জানান, তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ থাকলেও হাতে নাতে ধরতে না পারলে ব্যাবস্থা নেয়া সম্বব নয়। অভিযুক্ত প্রধান হিসাবরক্ষক ২০১৪ সাল থেকে এ হাসপাতালে আছেন। বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ এসেছে। হাসপাতালের আশপাশ থেকে মাদকের বোতল গুলি আমরা পরিষ্কার করেছি। আমার আগে ডাক্তার মিজানুর রহমান, ডাক্তার শাহিদা বেগম সহ যারা এখানে স্বাস্থ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন তারা মাদক সেবনের বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার বৈঠক করেছেন তখন আমি আরএমও হিসেবে ছিলাম।
‘তাই বিষয়টি সর্ম্পকে মোটামুটি অবগত আছি। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তারাও কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তিনি দাপ্তরিক কাজের কোন ব্যত্যয় না ঘটালে তার ব্যক্তিগত বিষয়নিয়ে আমরা তেমন কিছু করতেও পারি না। কিন্তু যেহেতু অভিযোগ আসছে বার বার তাই তাদেরকে আরো কঠোরভাবে হুশিয়ার করবো। প্রয়োজন হলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ডোপ টেস্ট’র ব্যবস্থাও নেবো।’- বলেন তিনি।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, এটি কোন প্রকারেই কাম্য নয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে মদকাসক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আমাকে অবগত করেনি, তাদের উচিৎ ছিল আমাদের জানানো। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনএনিউজ২৪.কম/আশরাফ উদ্দিন/এনএএম