20 C
আবহাওয়া
৮:৫৬ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৪ (ঝিনাইদহ-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৪ (ঝিনাইদহ-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের হালচাল।

ঝিনাইদহ-৪ আসন

ঝিনাইদহ-৪ এই আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলা এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা, ঘোড়াশাল, ফুরসুন্দি ও মহারাজপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৮৪ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৬ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১১ হাজার ৮ শত ৪৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৯ শত ৭১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর শিকদার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৫ শত ৫৩ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ১ শত ৪২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৬ শত ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান মিয়া। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৬ শত ৩৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ২ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ৯ শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান মিয়া। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ৪ শত ৫৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান মিয়া বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২২ হাজার ১ শত ২৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬ হাজার ৪শত ৫৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান মিয়া বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৯ হাজার ৫ শত ১৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৬ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮ হাজার ৮ শত ৭৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৪ শত ৭৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ওয়ার্কাস পার্টির মোস্তফা আলমগীর। হাতুড়ি প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫ হাজার ৩ শত ৯৮ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৬ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৩শত ৬০ জন।

একাদশ জাতীয় সংসদে ঝিনাইদহ-৪ আসেন প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাতা প্রতীকে এলডিপির খন্দকার মেহেদী হাসান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির ইছাহক আলী বিশ্বাস, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এইচএম মমতাজুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৬ হাজার ৪ শত ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৯ হাজার ৫ শত ৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-৪ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঝিনাইদহ-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.২০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.২১%, বিএনপি ৩৭.৫৩%, জামায়াতে ইসলামী ১৭.৮৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.৪৩% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৭৬%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪২%, বিএনপি ৪৫.৭৮%, জাতীয় পাটি ০.৯৯% , জামায়াতে ইসলামী ১৫.১৭ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৩৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৯৩%, ৪দলীয় জোট ৫৫.৩৪%, জাতীয় পার্টি ১.৪২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৩৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.৫০%, ৪ দলীয় জোট ৪৮.২৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.২৩% ভোট পায়।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের একাংশ): এ আসনের সংসদ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম আনার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান মৃত্যুবরণ করার পর তিনিই আওয়ামী লীগকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিন্তু সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রকাশ্যে এ আসন থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ও কালীগঞ্জ সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি, তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবলীগের সভাপতি আয়ুব হোসেন খান, লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ সাগর ও সাবেক পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু, সাবেক প্যানেল মেয়র হামিদুল ইসলাম হামিদ।

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক এমপি নুর উদ্দিন ও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মণ্ডল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মুফতি আহমেদ আবদুল জলিল মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ- ৪ সংসদীয় আসনটি এক সময় বিএনপির দুর্গ ছিল। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টুর একক নিয়ন্ত্রণে ছিল এই আসনটি। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ৪ বারের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টুকে পরাজিত করে বিএনপির দূর্গ দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান। কিন্তু ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুল আজীম আনার মনোনয়ন পান এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যার ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলে অন্তকোন্দল রয়েছে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। বিএনপি চাইবে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৮৪তম ঝিনাইদহ- ৪ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/শিরীন,ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ