27 C
আবহাওয়া
১০:০১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রামে যেমন চলেছে লকডাউনের ১ম দিন

চট্টগ্রামে যেমন চলেছে লকডাউনের ১ম দিন

চট্টগ্রামে যেমন চলেছে লকডাউনের ১ম দিন

বিএনএ, চট্টগ্রাম:  দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন আরোপ করেছে সরকার। চট্টগ্রামে লকডাউনের শুরুর দিনে গণপরিবহন ও শপিং মল বন্ধ হওয়া ছাড়া সব কিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। সীমিত পরিসরে খুলেছে দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস। তবে গণপরিবহন না চলায় অফিসগামী মানুষকে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ।

এদিকে মার্কেট-শপিংমল খুলে দেওয়ার দাবিতে প্রথমদিনেই চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ী, দোকানি ও কর্মচারীরা। এসব কর্মসূচিতে হাজারও মানুষের সমাগম ঘটে।

সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে এবং বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর নতুন ব্রিজ, অক্সিজেন, মুরাদপুর, চকবাজার, কোতোয়ালী, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, টাইগারপাস, সদরঘাট, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, বারিকবিল্ডিংসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অফিসগামী যাত্রীদের। যানবাহন না পেয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যে। যান চলাচলও বন্ধ থাকায় টেক্সি-রিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হয় কর্মস্থলে। মাঝে মধ্যে এক-দুটি বাসের দেখা মিললে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন লোকজন।

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা সুলতান আহমেদ জানান, লকডাউনে অফিস খোলা থাকায় বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। কিন্ত বেরিয়ে দেখছি সব স্বাভাবিক। শুধু বাস চলাচল বন্ধ। এতে অফিসে আসা-যাওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে গেছে। সকালে কোনরকমে অফিসে আসলেও বাসায় কী ভাবে যাবো সেটাই ভাবছি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ আছে। বিশেষ করে বাস বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের ভোগান্তিটা বেশি হচ্ছে।

লকডাউনে পুরো নগরী নিস্তেজ হয়ে পড়লেও কোথাও কোথাও দোকান খোলা রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান খোলার এমন খবরে নগরীর লাভলেইন, জুবলী রোড, নিউ মার্কেট, রেল ষ্টেশন ও ষ্টেশন রোডে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এতে দোকান খোলা রাখায় জরিমানা করা হয় অন্তত ৩ জন ব্যবসায়ীকে। এছাড়া লকডাউনে মুখে মাস্ক ছাড়া বের হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে ৯ জনকে। এতে নেতৃত্ব দেন চসিকের স্পেশাল ম্যাজিষ্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) জাহানারা ফেরদৌস ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী।

ম্যাজিস্ট্রেট জাহানারা ফেরদৌস বলেন, আমরা অভিযানে নেমে দেখতে পেয়েছি ৩-৪টি দোকান খোলা আছে। তাদের জরিমানা করা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সকাল থেকে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার কিছুই দেখা যায়নি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জেলা প্রশাসনের একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাগিদ দিয়েছেন এবং মাস্ক বিতরণ করেছেন।

লকডাউনের বিরোধিতা করে দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা ‘লকডাউন মানি না, মানবো না’ ,এই মুহূর্তে দোকান খুলে দাও, খুলতে হবে’ স্লোগান দেন। লকডাউন তুলে না নিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন নেতারা।

এসময় ব্যবসায়ীরা বলেন, সারাদেশে সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে। বইমেলা, বেসরকারি অফিস- সব চললে দোকানপাট কেন বন্ধ থাকবে। আমাদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হোক। দোকানপাট বন্ধ থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।

নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের তামাকুমণ্ডি লেন বণিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব বলেন, প্রায় ১১০টি মার্কেটের দোকানের মালিক-কর্মচারিরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। সামনে রমজান। আমরা ঈদের কেনাকাটা করতে না পারলে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ব। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখতে চাই।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে ব্যবসায়ীরা মিছিল-সমাবেশ করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে উনারা কর্মসূচি পালন করেছেন।

এদিকে, লকডাউনের প্রথম দিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আয়া-ওয়ার্ডবয়দের গাদাগাদি থাকলেও, তেমন ছিল না রোগীর চাপ।

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ আর মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি রুখতে সারাদেশে সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হলো ৭ দিনের লকডাউন। এ কারণে আজকে একটু রোগী কম। প্রতিদিনই প্রচুর রোগী আসে।

উল্লেথ, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় এর আগে গতকাল রোববার (৪ এপ্রিল) প্রজ্ঞাপন জারি করে সোমবার সকাল ৬টা থেকে আগামী রোববার (১১ এপ্রিল) রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়: সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন ও উৎপাদন ব্যবস্থাসহ জরুরি সেবা দানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বিদেশগামী ও বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও সমুদ্র বন্দর কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবার জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস-আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা নেওয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণকার্য চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে শিল্প-কারখানা এলাকার নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ঔষধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়া যাবে না। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং অন্য কোনো শহরে যেতে পারবে না।

কাঁচা বাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ