বিএনএ, মানিকগঞ্জ : নিজে কখনও উঠেননি উড়োজাহাজে। অথচ নিজের বানানো উড়োজাহাজে চড়ে আকাশে ভাসলেন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি জুলহাস। তার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সংবাদ হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে এসেছেন মানিকগঞ্জের ছেলে উড়োজাহাজে তৈরি করা সেই জুলহাস।
তারেক রহমানের নিদের্শে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রীতা জুলহাসের সঙ্গে দেখা করেন। তাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
আতিকুর রহমান রুমন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমরা এসেছি, তাকে সাহস জোগাতে। ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো কিছু করতে পারে। জুলহাস নিজে কখনো প্লেনে না ওঠলেও নিজে প্লেন বানিয়েছে, তাই তাকে প্লেনে উঠানোর ব্যবস্থা করে প্লেনের যাবতীয় বিষয় অবলোকনের ব্যবস্থা করা, যাতে ভবিষ্যতে আরও বড় বড় আবিষ্কার করতে পারেন। সেই প্রত্যাশা করে দলটি।
একই সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি সব-সময় তার পাশে থাকবে বলে কথা দেন নেতারা।
উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায় বাড়ি হলেও নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা (বিলপাড়া) গ্রামে বাড়ি করে পরিবারসহ বসবাস করছেন জুলহাস। বাবা কৃষক জলিল মোল্লা। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। জিয়নপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। অর্থাভাবে আর পড়া হয়নি। বর্তমানে ঢাকায় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন জুলহাস।
জানা গেছে, শৈশব থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল জুলহাসের। পড়াশোনার ইতি টানলেও উদ্ভাবনী চিন্তা তাকে তাড়িয়ে বেড়াত। ২০২১ সালে যখন প্রথমবারের মতো আরসি (রিমোট কন্ট্রোল) প্লেন দেখেন, তখন ঠিক করেন নিজে একটা প্লেন বানাবেন। এরপর শুরু হয় নিরলস গবেষণা। ইউটিউব, বইপত্র ঘেঁটে ধাপে ধাপে শিখতে থাকেন প্লেন তৈরির খুঁটিনাটি। যন্ত্রাংশ জোগাড় করা থেকে শুরু করে নকশা তৈরি, কাঠামো সাজানো, সবকিছু করেছেন নিজেই। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টার পর অবশেষে সফলতা এল। নিজের হাতে তৈরি সেই প্লেনে চড়ে আকাশে উড়েন তিনি।
জুলহাস মোল্লা বলেন, এসএসসির পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। পেশায় ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি হিসেবে ঢাকায় কাজ করি। চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে বিমান তৈরি করার। এর কিছুদিন পর আল্ট্রালাইট বিমান তৈরির কথা মাথায় আসে। কিন্তু তাতে তেমন সফলতা আসেনি। পরে গত এক বছর চেষ্টা করে এই বিমানটি তৈরি করতে সক্ষম হই।
তিনি আরও বলেন, মূলত টাকার জোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন, আর অ্যালুমানিকনিয়াম, এসএস দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। ওজন হয়েছে ১০০ কেজি। গতি পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে একটি ডিজিটাল মিটার, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে পাখা তৈরি করা হয়েছে। ইঞ্জিন চলবে অকটেন অথবা পেট্রল দিয়ে। ঘণ্টায় গতি হবে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার।
উদ্ভাবক জুলহাস আরও বলেন, প্রথম দিকে পরিবার ও এলাকাবাসী আমাকে পাগল ভেবে হেলা করেছে। তবে এখন সবাই উৎসাহ আর বাহবা দিচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে এ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আছে।
জুলহাস জানান, ফায়ার অ্যালার্মের চাকরির পাশাপাশি চার বছর ধরে তিনি উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়ানোর চেষ্টা করছেন। শখের বসে তিনি প্রায় তিন বছর আগে একটি খেলনা বিমান তৈরি করে আকাশে উড়িয়েছিলেন। তিনি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজেই ড্রাইভ করে আকাশে উড়িয়েছেন উড়োজাহাজটি। এই উড়োজাহাজটির যন্ত্রাংশ তৈরিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করেছেন জুলহাস। তবে গত চার বছরে এই কাজের পেছনে ৮-১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরইমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে একটি আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।