26 C
আবহাওয়া
৮:১৯ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৪, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » সারাদেশে ‘মব জাস্টিস’ মহামারি!

সারাদেশে ‘মব জাস্টিস’ মহামারি!

সারাদেশে ‘মব জাস্টিস’ মহামারি!

।। বাবর মুনাফ ।।

দেশে মব জাস্টিস কালচার সব সময় ছিল। কিন্তু ভয়াবহ আকার ধারণ করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতা সারাদেশে অন্তত: সাড়ে ৪শ থানা-ফাঁড়ি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ করে। হামলা করে গণভবন, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। মব জাস্টিসের মাধ্যমে হত্যা করা হয় অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে। তার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

যদিও তার ধরন পাল্টেছে। এখন মবের শিকার হচ্ছে ছিনতাইকারী, ডাকাতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও। বাদ যাচ্ছে না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা। সারাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে কথিত ‘মব কালচার বা ‘মব জাস্টিস’’।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সব সময়ই ‘মব জাস্টিস’ বা ‘মোরাল পুলিশিংয়ের’ বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থায় আছে। মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সতর্কতা জারি করে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মবের প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর।”

YouTube player

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘মব তৈরি’ করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আউটার রিং রোডে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইউসুফ আলীর ওপর হামলা করা হয়। হামলাকারীরা তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ এবং ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে সৈকত এলাকায় টহলরত পতেঙ্গা থানা পুলিশের একটি দল ও আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। মব তৈরি করে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা যতই তর্জন করুক না কেন পরিসংখ্যান বলছে, সম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই ও ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মব জাস্টিসের নামে মারামারি, অত্যাচার কিংবা হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জামায়াত ইসলামীর দুইজন সক্রিয় কর্মী মবের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকার সেই ঘটনায় মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত ঢুকেছে’ বলে গণপিটুনি দিলে জামায়াত ইসলামীর দুই সক্রিয়কর্মী নিহত হয়। তাঁরা হলেন সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ ছালেক (৩৫)। তার আগে তাদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হয়েছেন। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।

জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম উদ্দিন এলাকায় আসতেন না। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এলাকায় ফেরেন। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে ৪ থেকে ৫টি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নেজামসহ একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় যান। সেখানে তাদের দেখে মসজিদের মাইকে এলাকায় ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা শুনে এলাকাবাসী তাদের আটকের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। এ সময় এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পিটুনিতে নেজাম ও ছালেক নিহত হন।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের মাছের খামার ও ইটভাটায় লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, নিহত জামায়াতকর্মীরা রাতে কেন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন এবং তাদের পিটুনি দিয়ে কেন হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন বলেন, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে জানিয়েছে সাতকানিয়া জামায়াতে ইসলামী। তিনি অভিযোগ করেন এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম প্রকাশ মানিকের ইন্দনে তার ভাই হারুন ও মমতাজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে এনে মাইকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, শুধু রাজধানীতে জানুয়ারি মাসে ৩৬টি হত্যা ৫৪টি ছিনতাই, ১৪৬টি চুরি এবং আটটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দাবি করছে এই সময়ে তারা ঢাকা শহর থেকে ৭১৯ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই পরিস্থিতিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত তিনটায় আচমকা নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডাকেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি তো হয়নি বরং অবনতি হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে গণপিটুনিতে সর্বোচ্চ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছর। ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৪৬ জন, যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ। ২০২৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র সূত্র জানায়, শুধু গত জানুয়ারি মাসে সারাদেশে গণপিটুনিতে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারির শেষ তিন দিনে যুক্ত হয়েছে অন্তত ১০ জন।

গত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে এক হাজার ১৪৫টি, যা ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের তুলনায় ৩৮২টি বেশি। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

তবুও তৃপ্তির ঢেকুর তুলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক!

বিএনএনিউজ/ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ