ঢাকা : রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে গত বৃহস্পতিবার রাতের ভয়াবহ আগুনের ক্লু ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করেছে। গ্যাসের চুলা জ্বলা অবস্থায় গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার পরিবর্তন করার চেষ্টা করছিলেন চুমুক কফি হাউসের এক কর্মচারী। এ সময় একটি সিলিন্ডার থেকে বের হতে থাকা গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে আসে। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় দোকানে। সেই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে পুড়েছে একে একে ৪৬ জন মানুষ।
জানা যায়, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন চুমুক কফি হাউসের দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান। তবে এই ঘটনায় নিজেদের দায় স্বীকার করেননি তাঁরা। বলেছেন, এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গোয়েন্দা সূত্র এর বেশি জানাতে রাজি হননি।
গ্রিন কোজি কটেজ থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়া তরুণ আইনজীবী যা বললেন
তরুণ আইনজীবী ইজাজ উদ্দিন আশিক রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রীন কোজি কটেজে যখন আগুন লাগে তখন তিনি ওই ভবনের চার তলার একটি রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত ছাদে উঠে অন্যকয়জনের সাথে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আটকে পড়া মানুষের চিৎকার, শিশুদের কান্নার শব্দ এখনও কানে ভেসে আসছে।
আশিক জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বেইলি রোডের গ্রীন কোজি কটেজ ভবনের চার তলার খানাস রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে একজন ক্লাইন্টের সাথে মিটিং এ বসি। খাবার অর্ডার করে এসে কথা বলছিলাম। হুট করে শুনতে পাই রেস্টুরেন্ট এর নিচে আগুন লেগেছে।
আমিও আমার ক্লাইন্টকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে যাবো ভাবতেই আমার নিচের ফ্লোরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। ফলে ছাদের দিকে উঠতে শুরু করি। ভবনে একটি মাত্র সিঁড়ি। ছাদে যাওয়ার পরও দেখি আগুন অনেক কাছে চলে এসেছে। তখন বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর পড়ে থাকা মানুষেদের উপর দিয়েই কোনরকমে দৌঁড়ে এবং এক পর্যায়ে হামাগুড়ি দিয়ে ছাদে পৌঁছাই।
‘ছাদে রেস্টুরেন্ট ছাড়াও কর্মীদের থাকার ঘর ছিল। আগুন যাতে সেখানে দ্রুত আসতে না পারে, তাই আমরা সেই ঘরে থাকা তোষক-বালিশসহ অন্যান্য জিনিস যেগুলো আগুন দ্রুত জ্বালাতে পারে সেগুলো ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেই। তখন আমিও লাফ দেয়ার চিন্তা করি, কিন্তু সাহস হয়নি। এরমধ্যে বাসার সবার সাথে কথা বলে ফেলেছি। তখন সিদ্ধান্ত নেই মরতেই যখন হবে, সিজদায় পড়ে যাই। আল্লাহু আকবর বলতে বলতে আজান দেই। এ সময় পাশের ভবন থেকে ফায়ার সার্ভিস সিড়ি ঘরের আগুনে পানি মারতে শুরু করে।’‘তখন মনে হলো আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন”।আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একপর্যায়ে ছাদের এবং সিড়িঘরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর ছাদে অবস্থান নেয়া প্রথমে নারী ও শিশু এবং পরে আমাদের উদ্ধার করে’।