28 C
আবহাওয়া
৮:৩৩ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ধর্ষণ: জাবি’র সেকাল-একাল

ধর্ষণ: জাবি’র সেকাল-একাল

ধর্ষণ: জাবি’র সেকাল-একাল

বিএনএ, ঢাকা: দীর্ঘ ২৬ বছর পর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। ১৯৯৮ সালের আগষ্ট মাসে উত্তপ্ত যে ঘটনা এবং সংগঠনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত করা হয়েছিল, সে সংগঠনের নাম যুক্ত হয়েছিল ২৬ বছর পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ঘটনা ও সংগঠনের নাম একই রয়েছে। শুধু বদল হয়েছে ব্যক্তি। চলুন ফিরে যাই ২৬ বছর আগে।

১৯৯৮ সালের আগষ্ট মাসের ঘটনা। একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিমউদ্দিন মানিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শতধর্ষণ বা সেঞ্চুরি উৎসব’ উদযাপন করেছিল। ওই সংবাদে বলা হয়েছিল ধর্ষকদের কিংপিন, জসিমউদ্দিন মানিক তার শততম ধর্ষণ পূর্ণ হওয়ায় একটি ককটেল পার্টি ছুঁড়েছেন এবং তার সহযোগী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মীদের মিষ্টি উপহার দিয়েছেন।

এরপর ১৯৯৮ সালের ১৯ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ ও বিক্ষোভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্র ঐক্য গঠন করে। লাগাতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্তের জন্য কর্তৃপক্ষকে একটি কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়।

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কমপক্ষে ২০টি ধর্ষণের এবং ৩০০টি যৌন হয়রানির ঘটনা নিশ্চিত করে।

১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জসীমউদ্দীন মানিককে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করলেও তার অনুসারীরা এক বছর থেকে তিন বছরের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ অবশ্য জসিমউদ্দিন মানিকসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে রাজি হননি।

মানিকের অন্যতম অনুসারী এবং “ধর্ষক গ্রুপ” এর সদস্য মীর মেহেদী হাসান টিটু ১৯৯৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদকে লাঞ্ছিত করেন। এরপর তাকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। যদিও এই টিটু ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

পরে ২০০১ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য বামপন্থী সংগঠনের সাতজন কর্মীকে বহিষ্কার করে এবং ৫২ জনকে কেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছিল। তবে হাইকোর্টের আদেশে এই পদক্ষেপ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

২৬ বছর পর গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ধর্ষক চক্র আবার ফিরে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক নারীকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি গণধর্ষণের মামলা করার পর পুলিশ প্রধান অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রধান অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তবে অভিযোগ ওঠার পর তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে শাখা ছাত্রলীগ জানিয়েছে।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জানিয়েছে, “তাদের বাড়ি আশুলিয়ায়। পূর্ব পরিচিত ব্যক্তি মামুন তার বাসায় বেশ কিছুদিন ছিলেন। শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মামুন তাকে যেতে বলেন”।

“সেখানে যাওয়ার পর মোস্তাফিজ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে বাসায় থাকা মামুনের কাপড়-চোপড় নিয়ে আসার জন্য আমার স্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়। কারণ মামুন ক্যাম্পাসে মোস্তাফিজের কাছে কিছু দিন থাকবেন”।

পরে তার স্ত্রী কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে এলে সেগুলো মীর মোশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে রেখে আসতে যায় মামুন। সেখানেই আটকে রাখা হয় ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে। “ওই রুম থেকে ফিরে এসে মামুন ও মোস্তাফিজ ভুক্তভোগী নারীকে বলে তার স্বামী অন্য দরজা দিয়ে আসবেন। তাদের সাথে সেখানে যেতে। পরে তাকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে” বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী।

রাতেই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন। রোববার দুপুরেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রেজিস্টার্ড ভবনের সামনে আবারো শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে বসে। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও মামলা করতে হবে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সংহতি প্রকাশ করে।

ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফি জানিয়েছেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, সহসভাপতি শাহ পরান সহসভাপতি, সহসম্পাদক মুরাদ হোসেন এবং কার্যকরী সদস্য সাব্বির হাসান । তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী। সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সনদ স্থগিদ এবং ক্যাম্পাসে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে মোস্তাফিজুরকে পালাতে সহায়তাকারী ৪৫তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. হাসানুজ্জামানকে। একই ভূমিকায় আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ৪৪তম ব্যাচের শাহ পরানের সনদও স্থগিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রাখায় সহায়তাকারী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের মুরাদ হোসেন, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুরকে পালাতে সহায়তাকারী ৪৬তম ব্যাচের এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মো. সাব্বির হাসানের (সাগর) সনদ স্থগিতের পাশাপাশি তাঁদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি হাইকোর্টে এক রিট আবেদন করে। পরের বছর ২০০৯ সালে হাইকোর্ট কর্মস্থলে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল।

বিএনএ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী,ওজি/ হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ