বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : ইরানের চারপাশের দেশগুলোতে ৪৫ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ১১ দেশে বেশ কিছু ঘাঁটি পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে প্রায় ৭৫০টি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোতেও মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স (ডিওডি)র বরাত দিয়ে মার্কিন অনলাইন সংবাদমাধ্যম অক্সিওস এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশগুলোতে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করার পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট জঙ্গি (আইএসআইএস) এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
অক্সিওসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি সেনা কুয়েতে। ১৯৯১ সালের কুয়েত-ইরাক যুদ্ধের পর থেকে দেশটিতে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ সেনা রয়েছে। এরপর রয়েছে বাহরাইনে। দেশটিতে মার্কিন সেনা রয়েছে ৯ হাজার।
কাতারে কমপক্ষে ৮ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বৃহৎ আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে এসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এটি মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের আঞ্চলিক সদর দপ্তর হোস্ট হিসাবে পরিচিত।
কয়েক বছর ধরেই সংযুক্ত আরব আমিরাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। যেখানে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি জর্ডানের রাজনীতিতে একটি সংবেদনশীল অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবুও জর্ডান সরকারের অনুরোধে জর্ডানে প্রায় ২ হাজার ৯০০ জন সেনা রয়েছে। জর্ডানের বিমানঘাঁটি, বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন গোয়েন্দা মিশনের জন্য জর্ডান অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সৌদি আরবে ২ হাজার ৭০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহায়তা দিতে এবং এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানকার সৈন্যরা বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রাখে এবং সামরিক বিমান পরিচালনায় সহায়তা করে।
ইরাকে ঠিক কতজন সেনা রয়েছে তা প্রকাশ করেনি ডিওডি। তবে এটি ২০২১ সালে বলেছে, কর্মীদের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০তে নেমে গেছে। সেনারা সেখানে ইরাকি সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়। এছাড়াও আইএসআইএসের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্যও সরবরাহ করে। তুরস্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৮৮৫ সেনা রয়েছে।
সিরিয়ায় রয়েছে প্রায় ৯০০ জন মার্কিন সেনা। এসব সেনা আইএসআইএসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া ওমানে মার্কিন বিমান বাহিনীর কয়েকশ সেনা মোতায়েন রয়েছে।
ইহুদি রাস্ট্র ইসরাইলেও একটি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। যার কোড নাম ‘সাইট-৫১২’। এ ঘাঁটিতে একটি রাডার নজরদারি সিস্টেম রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি শনাক্ত এবং ট্র্যাক করতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে এখানে ঠিক কত সেনা রয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
কোন দেশে ঠিক কতটা ঘাঁটি রয়েছে ডিওডি তার কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স জানিয়েছে, তুরস্ক, কুয়েত এবং সৌদি আরব প্রতিটিতে দেশে কমপক্ষে ১০টি ঘাঁটি রয়েছে। সামরিক ঘাঁটির অনলাইন ওয়েবসাইট মিলিটারিবেস.কম জানিয়েছে, ইরাকে ১২টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩রা জানুয়ারি ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড সমর্থিত ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, হামলায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুক্তরাস্ট্র ও ইরান যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/ হাসনা