বিএনএ, ডেস্ক:খুলনার আলোচিত খুনি এরশাদ শিকদারের বিলাসবহুল বাড়ি ‘স্বর্ণকমল’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এ ভবনের অর্ধেক একেবারেই ভেঙে ফেলা হবে। সেখানে উঠবে বহুতল ভবন। যা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আসছে। আর বাকি অর্ধেকে বিলাসবহুল স্বর্ণকমলের অস্তিত্ব ধরে রাখা হবে।
|জানা যায়, এরশাদের ছেলেরা নিজেরাই বাড়িটি ভাঙছেন। তিনি ঠিকাদার রবিউলের কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তবে বাড়ির ভেতরে কারও প্রবেশ করার অনুমতি নেই। বাড়টির অর্ধেক চিহ্ন থাকবে। বাকি অর্ধেক একেবারেই ভেঙে ফেলা হবে। সেখানে বহুতল ভবন উঠবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তার দুই স্ত্রী হলেন- খোদেজা বেগম ও সানজিদা নাহার শোভা। এরশাদ শিকদারের তিন ছেলে হলেন- মনিরুজ্জামান শিকদার জামাল, কামাল শিকদার ও হেলাল শিকদার। সুবর্না ইয়াসমিন স্বাদ ও জান্নাতুল নওরিন এশা নামে এরশাদ শিকদারের দুই মেয়ে ছিল। যার মধ্যে এশা ২০২২ সালের ৩ মার্চ আত্মহত্যা করেন।
বিলাসবহুল বাড়ি স্বর্ণকমল যে বানিয়েছিল তাকেও নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল এরশাদ শিকদারের হাতেই। খুলনার সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি ছিল এটি। ভারত থেকে নকশা করে আনা হয়েছিল। এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০টিরও বেশি খুনের অভিযোগ ছিল। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর দুধ দিয়ে গোসল করতেন তিনি ও তার সহযোগীরা। অসংখ্য নারী ধর্ষণ, একাধিক বিয়েসহ এমন কোনও অপকর্ম নেই যা এরশাদ শিকদার তার জীবদ্দশায় করেননি।
এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার বাবার নাম বন্দে আলী শিকদার। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৬৭ সালে জন্মস্থান নলছিটি থেকে খুলনায় চলে আসেন। কিছুদিন পর রেল স্টেশনের কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রেল লাইনের পাত চুরি করে বিক্রি করতো এমন দলে যোগ দেন।
পরে তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন এবং এলাকায় ‘রাঙ্গা চোরা’ নামে পরিচিতি পান শিকদার। মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই ১৯৭৬ সালে এরশাদ শিকদার রামদা বাহিনী নামে একটি দল গঠন করেন। যারা খুলনা রেল স্টেশন ও ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় চুরি-ডাকাতি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এই রামদা বাহিনী নিয়েই এরশাদ শিকদার ১৯৮২ সালে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন এবং একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
১৯৮২ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর এরশাদ শিকদার বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কিন্তু সমালোচনার মুখে কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন।
১৯৯৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় এরশাদ শিকদার ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর আরও ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তি এবং জোরপূর্বক ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ৬০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তার বডিগার্ড নুর আলম।
২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরশাদ শিকদারের বহু অপকর্মের সাক্ষী এই ‘স্বর্ণকমল’।
বিএনএ/ওজি