19 C
আবহাওয়া
৮:৩০ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কী থাকছে, নতুন সংবিধানে?

কী থাকছে, নতুন সংবিধানে?


বিএনএ : বিদ্যমান সংবিধানের সংস্কার নয়, সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের প্রস্তাব হলো, নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। সেখানেই নতুন সংবিধান অনুমোদন করা হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, দুবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেখানে তাদের ৬৯ দফা লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।

প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাব প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমান সংবিধানের গঠন আওয়ামী লীগের দলিল বলে মনে হয়। গণ-অভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে দেশ এখনো পৌঁছাতে পারেনি। এ জন্য নতুন সংবিধান প্রয়োজন। তাই তাঁরা বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার বা সংশোধন নয়, সম্পূর্ণ নতুন করে সংবিধান রচনার প্রস্তাব করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি সংবিধানের পাঁচটি মূলনীতি প্রস্তাব করেছে। সেগুলো হলো—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্র। তারা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন, সংসদের নাম ‘আইনসভা’ করা, সরকারের মেয়াদ চার বছর করাসহ নতুন সংবিধানের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে ‘প্রথম রিপাবলিকের প্রস্তাবনা’ এবং ‘দ্বিতীয় রিপাবলিকের প্রোক্লেমেশন’ জারি করে তা নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো আইন সভা হবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চকক্ষের নাম হবে জাতীয় পরিষদ এবং নিম্নকক্ষের নাম হবে আইনসভা। উচ্চকক্ষ রাষ্ট্রপতির অধীনে; নিম্নকক্ষ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের নিয়ে কিছু সংসদীয় কমিটি হবে, এই কমিটি নিম্নকক্ষের কাজ তদারকি করবে এবং গণশুনানি করতে পারবে। উচ্চকক্ষ পরপর তিনবার কোনো আইন পাস না করলে তা গণভোটে যাবে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয়ের মেয়াদ ৪ বছর হবে।

জাতীয় পরিষদে ১০০ আসন থাকবে। এখানে নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। আইনসভায় ৩০০টি আসনে সরাসরি ভোট হবে। সেখানে সংরক্ষিত আসন রাখা যেতে পারে। জাতীয় পরিষদের ১০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩৩টি আসনে পেশাজীবী-কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-আইনজীবী- চিকিৎসক-প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-সাংবাদিকসহ আইন দ্বারা তফসিলভুক্ত পেশা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষকে মনোনয়ন দিতে হবে।

উভয় কক্ষে পৃথকভাবে পাস হওয়ার পরই কেবল আইন প্রণয়ন হবে। উভয় কক্ষের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে, তা সংসদের বিবেচনায় পেশ করতে পারবে। সব সাংবিধানিক পদ ও মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগের পূর্বে তাকে জাতীয় পরিষদের শুনানিতে বাধ্যতামূলক উপস্থিত হতে হবে। ফলাফল অসন্তোষজনক হলে তাঁকে নিয়োগ করা যাবে না।

সংবিধানের প্রতি জাতিসত্তার স্বীকৃতি থাকতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচিত হবে। সংবিধানে গণভোটের বিধান থাকতে হবে। গণভোট ছাড়া শুধু আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশের জোরে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।

জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো—রাষ্ট্রকে সরকারের নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের বাইরে আনা গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আর প্রয়োজন হয় না। তবে আগামী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।

নাগরিক কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়ে, রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হবেন। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। দুবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। একজন রাষ্ট্রপতি পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করতে পারবেন না।

রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের যৌথসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। এ ছাড়া আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। অন্যান্য সাংবিধানিক পদেও আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়োগ দেবেন।

রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ বা ক্ষমা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে সংসদের উচ্চকক্ষের প্রস্তাব লাগবে। রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধান থাকবেন এবং জরুরি অবস্থা বিষয়ে উচ্চকক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য সংসদের উভয় কক্ষের সভায় পাস হওয়া প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে আসতে হবে।

নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে, কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি একই সঙ্গে নিজ দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। জীবনে দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রের আর কোনো পদেই তিনি আসীন হবেন না। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করবেন এবং রদবদল করতে পারবেন। তবে অপসারণ করতে হলে সংসদের অনুমোদন নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি হবেন। সংসদের জরুরি বৈঠক আহ্বানে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সংসদ নেতা পরামর্শদানের অধিকারী হবেন। সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা সভাপতিত্ব করবেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বাহিনীগুলোর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান হবেন। কোনো বাহিনীই সরাসরি তার অধীন থাকবে না। প্রতিরক্ষা বা স্বরাষ্ট্র কোনো মন্ত্রণালয়ই প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রধান হিসেবে থাকতে পারবে না। বাহিনীর ‘চেইন অব কমান্ড’ আইন ও বিধি দ্বারা সংগত থাকবে। চেইন অব কমান্ডে হস্তক্ষেপ হবে অবৈধ। কোনো আদালতই প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণে রায় ঘোষণা করতে পারবেন না। কেবল সংসদ কর্তৃক আস্থাভোটই হবে তাকে অপসারণের বৈধ উপায়।

নাগরিক কমিটি তাদের প্রস্তাবে সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব কেমন হবে, সেটাও তুলে ধরেছে। বিরোধীদলীয় নেতা ছায়া-মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারবেন। সংসদীয় কমিটিগুলোকে সরকারের নীতির সমালোচনা পাঠাবেন।

বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ