বিএনএ ডেস্ক : বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।বিস্ফোরণ অধিদফতরের সূত্রমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। গ্রামাঞ্চলে এই গ্রাহকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।বাজারে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার রয়েছে ।
বিস্ফোরণ অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, এলপিজি গ্যাস যে চাপ তৈরি করে, তার চেয়ে অন্তত চার গুণ বেশি চাপ ধারণ করার ক্ষমতা এসব সিলিন্ডারের থাকে। তাই সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো ঝুঁকিই নেই। তারপরও যেসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে তার মূলে রয়েছে এই সিলিন্ডারগুলো যথাযথভাবে পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহার না করা।সিলিন্ডারে দুর্ঘটনাগুলো মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে ঘটে। হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভ ইত্যাদিতে দুর্বলতার কারণে যেকোনো সময় গ্যাস লিক হতে পারে।
গ্যাস সিলিন্ডার, রেগুলেটর, পাইপ কেনার সময় সত্যায়িত সার্টিফাইড কোম্পানি কিংবা অনুমোদিত বিক্রেতাদের থেকে কেনা উচিত বলে মত দেন বিস্ফোরণ অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, শুধু সিলিন্ডার ভালো হলেও গ্যাস লিক হতে পারে যদি এর পাইপ, রেগুলেটর খারাপ মানের হয়। এখানে বাজারে ভালো খারাপ দুই মানের যন্ত্রাংশই আছে। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র মানুষ অনেক সময় বাধ্য হয়ে কমদামের মানহীন পণ্য কেনে। আবার অনেকে না জেনেই নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করছেন। এতেই বিপত্তি ঘটে।
সতর্কতা: এলপিজি সিলিন্ডার খাড়াভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। উপুড় বা কাত করে রাখা যাবে না। এমনভাবে রাখতে হবে যেন আশেপাশে কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা না লাগে।
সিলিন্ডার কোনো পাটাতনের ওপরে নয় বরং মাটিতে সমতল পৃষ্ঠে রাখতে হবে এবং চুলা, সিলিন্ডার থেকে কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি উপরে রাখতে হবে।
সিলিন্ডার কোনোভাবেই চুলার/আগুনের খুব কাছাকাছি রাখা যাবে না। সিলিন্ডারটি লম্বা পাইপের সাহায্যে চুলা থেকে অন্তত তিন ফুট দূরে স্থাপন করতে হবে।
সিলিন্ডার রান্নাঘরের চুলার নিচে, ক্যাবিনেটের ভেতরে কিংবা বদ্ধ অবস্থায় নয় বরং খোলামেলা জায়গায় এবং সমান ভূমিতে রাখতে হবে। যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে। তবে সরাসরি সূর্যের নিচে রাখা যাবে না। ছায়া যুক্ত শুষ্ক পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখতে হবে।
সিলিন্ডার যেখানে থাকবে সেখানকার একটি জানালা সব সময় খোলা রাখার চেষ্টা করতে হবে। না হলে ঘরের ওপরে ও নিচে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্যাস সিলিন্ডার পরিবর্তনের সময় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন চুলা চালু না থাকে।
আগুন, বিদ্যুৎ এবং তাপের যেকোনো রকম উৎস সেই সাথে দাহ্য, প্রজ্বলিত বা বিস্ফোরক পদার্থ এবং ভিন্ন কোনো গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে এই এলপিজি সিলিন্ডার দূরে রাখতে হবে।
যেখানে সিলিন্ডার রাখা হচ্ছে তার আশপাশে আগুন জ্বালানো, ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সিলিন্ডারের ওপরে ভারী বোঝা রাখা যাবে না।
রান্না শুরু করার আধা ঘণ্টা আগে রান্নাঘরের দরজা-জানালা খুলে দিন। রান্না শেষে চুলার নব ও এলপিজি সিলিন্ডারের রেগুলেটর সুইচ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
অনেক দিনের বদ্ধ ঘরে প্রবেশের পর সবার আগে দরজা জানালা খুলে দিতে হবে। যদি ঘরের ভেতরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায় তাহলে জানালা দরজা খুলে দিয়ে সাথে সাথে ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে ম্যাচের কাঠি জ্বালানো, ইলেকট্রিক সুইচ, সিলিন্ডারের রেগুলেটর কিংবা মোবাইল ফোন অন বা অফ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিএনএ/ ওজি
তথ্যসূত্র: বিবিসি