বিএনএ, ঢাকা: বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা আগুন সন্ত্রাস চালাচ্ছে, পুলিশ হত্যা করেছে, ইসরাঈলি বাহিনীর অনুকরণে হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে, আমাদের মা-বোনদের কাপড় ধরে টানাটানি করেছে, আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে এখন যারা গর্তে ঢুকেছে, তাদের গর্ত থেকে বের করে এনে শায়েস্তা করা হবে।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি বলেছিল ২৮ তারিখ ফাইনাল খেলা হবে, কিন্তু তারা খেলার আগেই মাঠ ছেড়ে চলে গেছে। পুলিশ একটা গুলিও ছোড়ে নাই, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজেই মির্জা ফখরুল সাহেবসহ সবাই মঞ্চ ছেড়ে চলে গেল, আর নেতাকর্মীরাও পেছনে পেছনে চলে গেল। অর্থাৎ খেলা শুরু হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়ে চলে গেল বিএনপি।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রয়াত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র সুযোগ্য সন্তান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদিকা ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতি নিশ্চিত করা সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। সেজন্য জনগণের পাশে থাকতে হবে। পাড়া-মহল্লায় দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাসে আগুন দিতে যদি কেউ উদ্যত হয়, তাদেরকে ধরে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত এই গণশত্রু ও দুষ্কৃতিকারীরা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাবে। বিএনপি-জামাত এখন রাজনৈতিক দল নয়, এরা রাজনৈতিক কর্মীও নয়, তারা জনশত্রুতে রূপান্তরিত হয়েছে। সেই কারণে তারা নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে চায়। আমরা চাই, তারা এই পথ পরিহার করে নির্বাচনে এসে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুক। কিন্তু তারা জনগণকে ভয় পায়, তাই ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মত জনগণের ওপর এখন পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ শুরু করেছে, মসজিদেও আগুন দিয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাড়ি ও বিচারপতিদের কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি কখনো হয়নি। স্বাধীনতার পূর্বকালে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকালেও বিচারপতির বাড়িতে কখনো হামলা হয়নি, কিন্তু তারা এই কাজটি করেছে। সুতরাং এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সমস্ত রক্ত চক্ষুর মধ্যেও কখনো ক্ষমতার সাথে আপোষ করেন নাই উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্রত, রাজনীতি ক্ষমতায় যাওয়া, বিত্ত বৈভব ও খ্যাতি অর্জনের সোপান হওয়া উচিত নয়। যে আদর্শ বিশ্বাস করে সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতিবিদকে সাহসী হতে হয়। যে রাজনীতিবিদ সাহসী নয়, সে আপোষ করে। সেই রাজনীতিবিদ আপস করে হয়তো অনেক পদবি পায়, কিন্তু পরবর্তীতে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যায় এবং আপোষকামী হিসেবে সে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এরকম বহু রাজনীতিবিদ আমাদের দেশে ছিলেন, এখনো আছে।
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই অবহেলিতরা ভাতা পাচ্ছেন: এমপি নোমান
তিনি বলেন, আমি আখতারুজ্জামান বাবু ভাইকে কাছ থেকে দেখেছি, কেউ তার কাছে গেছে কাউকে না বলতে শুনিনি। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ ছিলেন, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী ছিলেন এবং একজন বড় দানশীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ’৭৫ এর পরে যদি আক্তারুজ্জামান বাবু ভাই মন্ত্রী হতে চাইতেন জিয়াউর রহমানের সময় মন্ত্রী হতে পারতেন। জিয়াউর রহমানের বিদায়ের পর এরশাদ যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় তখনো মন্ত্রী হবার জন্য তাকে কয়েক দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। আক্তারুজ্জামান বাবু ভাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে বেঈমানি করেন নাই। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, কারাগারে গেছেন, ঝুঁকি নিয়ে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রয়াত আক্তারুজ্জমান চৌধুরী বাবুর সন্তান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, তিনি একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ ছিলেন, কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। তাঁহার কর্মগুণে মরেও আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। তার জীবনের প্রতিটি কর্ম আজও চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে আমার সুযোগ হয়েছে সারা বাংলাদেশ ভ্রমণ করার। যেখানেই গিয়েছি, আমার বাবার কথা বললেই মানুষের একটা আলাদা সম্মান আমি দেখেছি। আমি মনেকরি আমার এবং আমার পরিবারের সবচে বড় পাওনা।
অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনএনিউজ/ বাবর মুনাফ