ধর্ম ডেস্ক: সাধারণত বীর বলতে যুদ্ধের ময়দানে অপর পক্ষকে হারিয়ে দেওয়া। যার অসাধারণ কর্মকাণ্ডে দেশ, জাতির জন্য কল্যাণকর বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। হ্যাঁ, এরা সত্যিকার অর্থেই বীর। কিন্তু হাদিসে ‘প্রকৃত বীর’ উপাধি দেওয়া হয়েছে আরেক শ্রেণির মানুষকে। তারা কারা? তারা সেসব লোক, যারা কঠিন রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ইসলামি চিন্তা অনুযায়ী, শয়তানের উস্কানিতেই মানুষ রাগান্বিত হয়। তাই রাগ-নিয়ন্ত্রণ সবার পক্ষে সহজ নয়। যে এই কঠিন কাজটি করতে সক্ষম, তাকে প্রিয়নবী (স.) প্রকৃত বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে—
‘সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং প্রকৃত বীর সে-ই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (বুখারি: ৫৬৮৪)
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসুল (স.) কখনো নিজের কোনো ব্যাপারে কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে, মহান আল্লাহর নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে তার জন্য যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতেন।’ (আল জামে বাইনাস সাহিহাইন: ৩১৮৪)
এক ব্যক্তি নবীজি (স.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ করো না’। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (স.) প্রতিবারই বললেন, ‘রাগ করো না’। (বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)। নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে এমন অসংখ্য ঘটনা আমরা দেখতে পাই, যা থেকে আমরা বুঝতে পারি- রাগান্বিত অবস্থায় কী করা উচিত।
রাগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (স.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)
রাগ দমনকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়ে নবীজি (স.) বলেন, ‘তুমি রাগ করবে না, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত।’ (তিবরানি: ২১)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার শিক্ষা রয়েছে ইসলামে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে কঠোর হওয়া যাবে না। হজরত আলী (রা.) এক যুদ্ধে অমুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধানকে সম্মুখযুদ্ধে ধরাশায়ী করলেন এবং যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন, তখন তিনি আলী (রা.)-এর মুখে থুতু নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আলী (রা.) লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলেন। তখন ওই সেনাপ্রধান বললেন, ‘আপনি আমাকে হত্যা করতে পারতেন, কিন্তু তা করলেন না কেন?’ উত্তরে আলী (রা.) বললেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। আপনার সঙ্গে আমি যুদ্ধ করছি শুধু আপনার অবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহের কারণে। আমার মুখে থুতু নিক্ষেপের পর আমি যদি আপনাকে হত্যা করতাম, তবে তা হয়ে পড়ত আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহার বহিঃপ্রকাশ, যা আমি কখনোই চাই না।’ (সাহাবা চরিত)
আল্লাহ তাআলা রাগ নিয়ন্ত্রণকারীদের প্রশংসায় আয়াত নাজিল করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা রাগ সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, (তারাই সৎকর্মশীল।) বস্তুত: সৎকর্মশীলদেরকেই আল্লাহ ভালোবাসেন। (সুরা ইমরান: ১৩৪)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, রাগ দমনকারীরা দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)।
সুতরাং, নবীজির উম্মত হিসেবে রাগের সময় আল্লাহর পথে আমাদের চলার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ