বিএনএ ডেস্ক : শুরুটা করেছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আর শেষটা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।চিকিৎসার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ৭ই মে রাতে থাইল্যান্ড যাওয়ার সূত্র ধরে পরদিন ৮ই মে রাত ১০ টায় আওয়ামী নিষিদ্ধের দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনের সড়কে অবস্থান নেয়।

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত লিখেছেন, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সাথে আমরা নাই।”
রাত ১টার দিকে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি মিছিল যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়। পরদিন জামায়াত ইসলামীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজত ইসলাম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেয়। তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা করে।
এই অবস্থায় ১০ই মে রাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১২ই মে প্রজ্ঞাপনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এই অবস্থায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু পরাশক্তির বেশিরভাগ দেশ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে ছাফ জানিয়ে দেয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হবে না। ফলে পরাশক্তির দেশগুলোর চাপমুক্ত হতে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার তফসিল ঘোষণা আগে আওয়ামী লীগ কার্যক্রমের ওপর নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার করার সম্ভাবনার গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
কিন্তু এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন বাংলাদশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক করার নীল নকশা প্রস্তুত করেছে। তারই অংশ হিসাবে কমিশন আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য রাখার সুপারিশ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এছাড়া অনলাইনেও তার মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এই তথ্য জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব অনুমোদন পেলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী এমপি ও নেতারা দেশ ছেড়েছেন। অনেকে পালিয়ে আছেন। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যার অভিযোগে তাদের বিচার চলছে। অনেকের পলাতক ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর আগে সংস্কার কমিশন এমন বিধান রাখার প্রস্তাব করেছিল। ইসি এর বিরোধিতা করে মার্চে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে বলেছিল, এমন বিধান করা হলে তা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে। তবে এখন সেই প্রস্তাব আরপিওতে যুক্ত করার কথা বলেছে ইসি।
আরপিওর সংশোধন প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হলে সরকারের অনুমোদনের জন্য তা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন হবে। সেই ধাপ পেরিয়ে রাষ্ট্রপতি সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারি করবেন।
এছাড়া অনলাইনে রাখলে সুযোগ বন্ধ রাখায় আওয়ামী লীগের এইসব নেতা মন্ত্রী এমপিরা আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য বিবেচিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন ওঠেছে, কার স্বার্থে এমন আরপিও সংশোধনী করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় হাজার হাজার নেতার নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে। এসব নেতাদের বেশির ভাগই ফেরারি। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইসির আরপিও সংশোধন প্রস্তাবে আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
.এছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান গত এক বছরের বেশি সময় কারাগারে আটক রয়েছে। তারাও যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেকারণে অনলাইনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করার বিধান রাখা হচ্ছে না। এসব বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর সংশোধনী মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কফিনে শেষ পেরেক মারতে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
সৈয়দ সাকিব