25 C
আবহাওয়া
৬:৪৮ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৯ (নরসিংদী-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৯ (নরসিংদী-১)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নরসিংদী-১ আসনের হালচাল।

নরসিংদী-১ আসন

নরসিংদী-১ সংসদীয় আসনটি আমদিয়া, পাঁচদোনা ও মেহের পাড়া ইউনিয়ন ব্যতীত নরসিংদী সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৯৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪ শত ২৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ২ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ২ শত ৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দীন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৩ শত ৪০ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩ শত ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৩ শত ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৩ শত ৫৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪ শত ৯৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯২ হাজার ১৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১ হাজার ৩ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৮ শত ৮৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ২ শত ২২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯ শত ৪১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২২ হাজার ১ শত ৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খায়রুল কবির খোকন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ৪ শত ৫৪ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৫ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৬ হাজার ৫ শত ৪৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৮ শত ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ মোস্তফা জামাল। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪ হাজার ৪ শত ৭৫ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৭ হাজার ৯ শত ৩৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফ হোসেন ভুইঁয়া, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আরিফুল ইসলাম ভুইঁয়া, মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের মোবারক হোসেন আখন্দ এবং মাছ প্রতীকে গনফ্রন্টের জাকির হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খায়রুল কবির খোকন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৪ হাজার ৭ শত ৮৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশিরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নরসিংদী-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নরসিংদী-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৮২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.১১%, বিএনপি ৫৮.৪২%, জাতীয় পার্টি ৬.৫০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৯৭%ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.২৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৯৪%, বিএনপি ৩৯.৮০% জাতীয় পাটি ১৮.৭৩%, জামায়াত ইসলামী ৫.৪৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.০৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.০০ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.২১%, ৪ দলীয় জোট ৫২.৭৬%, জাতীয় পার্টি ২.৭৫ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৬৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫১.৭৩%, ৪ দলীয় জোট ৪৪.৬৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৫৯% ভোট পায়।

নরসিংদী-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয় অনেকটা নিশ্চিত।

এছাড়া আরও মনোনয়ন চাইবেন, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন, প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই সাবেক মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য খায়রুল কবির খোকন, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যাীন জেলা বিএনপির সদস্যশ সচিব মঞ্জুর এলাহী, চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য সামসুদ্দিন আহমেদ এছাকের জেষ্ঠ্যা পুত্র জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. শফিকুল ইসলাম।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়, নরসিংদী ১ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। কিন্তু ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পর থকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। ক্লিন ইমেজের অধিকারী বর্তমান এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতিক দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্পষ্টভাবেই দুটি ধারায় বিভক্ত। রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীদের মধ্যে এ বিভক্তি খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যায়।

অন্যদিকে ক্ষমতার বাহিরে থাকায় বিএনপি সাংগঠনিক দিক থেকে মজবুত নয়। তবে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচুর নিরব ভোটার রয়েছে। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই আসনে নির্ভার হতে পারছে না ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৯৯তম সংসদীয় আসন (নরসিংদী-১) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৮ (গাজীপুর-৫)

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ