বিএনএ ডেস্ক :একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলছে। রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছেন আন্দোলনকারীরা। পাল্টা কর্মসূচিতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলছে। রোবারের(৪ আগস্ট) দিনভর সংঘর্ষে রাত পর্যন্ত ১৪ পুলিশসহ ৯০ জন নিহত হয়েছে । তাদের মধ্যে ১৮জন আওয়ামী লীগ সমর্থক ও ১জন সাংবাদিক।আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। ৫শতাধিক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য আহত হয়। রাজধানী ঢাকায় মৃতের সংখ্যা ১০।
মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩জন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
মাগুরা
মাগুরায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (রাব্বি) নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি পৌরসভার পারনান্দুয়ালী এলাকায়।বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক মহসিন উদ্দিন জানান, দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। তার শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন।
ফেনী
ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার বেলা দুইটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা অসহযোগের সমর্থনে মহিপাল এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। তবে দুপুর দুইটার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া তিন গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন।
সিলেট
সিলেটে গোলাপগঞ্জে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় গুলিতে এক ব্যবসায়ীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ সহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। তাদের মধ্যে ২০ জনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে ১, বরিশালে ১,জয়পুরহাটে ১,কুমিল্লায় ১, কিশোরগঞ্জে ৪ জন নিহত হয়েছে।
নরসিংদী
নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে আওয়ামী লীগের ছয় কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন উত্তেজিত জনতা। এছাড়া তাদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন চার আন্দোলনকারী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (৪ আগস্ট) আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাদের প্রতিহত করতে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে চারজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে দিনভর সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ সদরে ৩ জন, রায়গঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার লিটনসহ ৬ জন ও শাহাদাতপুরে একজন রয়েছেন।
সন্ত্রাসী হামলায় সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানার ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে আজ রোববার সারা দিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে বহু হতাহতের খবর আসছে।
এর মধ্যে বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় সন্ত্রাসী হামলায় এই পুলিশ সদস্যদের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
১৪ পুলিশ নিহত
সারা দেশে ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে একজন নিহত হয়েছেন ।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস অ্যান্ড ক্রাইম) বিজয় বসাক গণমাধ্যমকে জানান, তাঁরা থানায় গিয়ে ১১টি লাশ পেয়েছেন। এর মধ্যে আটটি লাশ মসজিদের পাশে স্তূপ করা অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনটি লাশ পাওয়া গেছে পুকুরে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এখনো নিখোঁজ।
ঘটনা সম্পর্কে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া প্রথমে হাজারখানেক মানুষ দলবেঁধে থানার দিকে আসে। সেখানে তাঁরা কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে যায়। পরে কয়েক শ মানুষ অতর্কিতে থানায় এসে হামলা চালায়। তাঁরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত ১১–১২ জন পুলিশ সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক কলেজছাত্রসহ আটজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে ঝুমুর পর্যন্ত এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
আটজনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর কলেজছাত্রের নাম সাদ আল আফনান। সে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে।
ঢাকা
সাইন্সল্যাবে ১ জনসহ ঢাকায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে সাইন্সল্যাব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল ১১টার দিকে বাটা সিগন্যালের দিক থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল সাইন্সল্যাবের দিকে আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।
শেরপুর
শেরপুরে সরকার পতনের দাবিতে একদফা আন্দোলনে নামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের টহল গাড়ির চাপায় অনন্ত তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
নিহতরা হলেন আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র ও জেলা শহরের বাগরাকশা মহল্লার বাসিন্দা তুষার (২৪), আইটি উদ্যোক্তা জেলা সদরের পাকুড়িয়া চৈতনখিলার মাহবুব (৩০)। অন্যজনের নাম এখনো জানা যায়নি।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/ বিএম/ ওজি, এসজিএন