23 C
আবহাওয়া
১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এমপি আনার হত্যা: মিন্টু শুধু দক্ষ রাজনৈতিক নেতা নয়, অভিনেতাও বটে!

এমপি আনার হত্যা: মিন্টু শুধু দক্ষ রাজনৈতিক নেতা নয়, অভিনেতাও বটে!


বিএনএ : এতক্ষণ যার কথা শুনলেন তিনি ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তাকে সবাই একজন মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসাবেই চেনেন। কিন্তু ঝিনাইদহ ৪ কালীগঞ্জ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পর দেশের মানুষ দেখলেন তিনি একজন দক্ষ অভিনেতাও বটে।

আনার হত্যার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর তার বাড়িতে গিয়ে ডরিনকে স্বান্ত্বনা দেন। গণমাধ্যমে ডরিনকে পাশে নিয়ে নিহত আনারের প্রশংসা করেন। তাকে জনপ্রিয় নেতা হিসাবে তুলে ধরে ৪০ দিন শোক পালন করার প্রস্তুতির কথাও বলেন। অথচ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুল আজীমকে সমর্থন দেওয়া দূরে থাক, তার বিরুদ্ধে একজন প্রার্থী দাড় করান মিষ্টার ঝিনাইদহ খ্যাত এই মেধাবি ও সুচতুর রাজনীতিবিদ সাইদুল করিম মিন্টু।

ডরিনের কষ্টের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তাকে ম্যাকিয়াভেলীজমের আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

এমন দরদি মানবিক মানুষ ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম হত্যার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে? হ্যা এই সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে কিলার গ্রুপের যোগাযোগ ছিল। তদন্ত কর্মকর্তা এমন তথ্য পেয়েছে।

কলকাতায় এমপি আনারকে খুন করার পর তার ছবি ও ভিডিও ধারণ করে শিমুল ভূঁইয়া । যা পরবর্তীতে বাংলাদেশে অবস্থানরত আখতারুজ্জামান শাহীনের কাছে পাঠানো হয়। সেই ছবি ও ভিডিও শাহীন মিন্টুর কাছে পাঠিয়ে লিখে ‘আনার শেষ, নমিনেশন কনফার্ম’।

অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়ক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে মিন্টুর ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ প্রকাশ গ্যাস বাবুর ফোনে যোগাযোগ হয়। তারা হোয়াটসঅ্যাপে হত্যার ছবি বিনিময় করে ক্ষান্ত হয়নি, ফরিদপুরের ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে দেখাও করেছিলেন। ওই সময় গ্যাস বাবুর কাছে চুক্তির বাকি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দাবি করে শিমুল ভূঁইয়া। বিষয়টি সাইদুল করিম মিন্টুকে জানানো হয়। মিন্টু গ্যাস বাবুকে ২৩ শে মে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

কিন্তু শিমুল ভূঁইয়া ও তার ভাইপো তানভীর ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর সব এলোমেলো হয়ে যায়। এই অবস্থায় গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইল মিন্টু নিয়ে নেয় এবং পুকুরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মিন্টুর পরার্মশে হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে গ্যাস বাবু।

ডিবির তদন্ত সূত্র জানায়, গত ১৬ মে মিন্টু এমপি আনার হত্যার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন, এমনকি ছবিও পেয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা নিহতের পরিবারকে তিনি জানাননি।

বাবুর মোবাইল ফোন কেন মিন্টুর কাছে ছিল এবং কেন তিনি হত্যার তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা নিহতের পরিবারকে জানাননি? গ্রেপ্তার হওয়ার পর এর কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি মিন্টু।

প্রসঙ্গত, ডরিনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা বদলির পর আনার হত্যাকান্ডের নাটকীয় মোড় নেয়। পাল্টে যায় দৃশ্যপট। কিলার মিশনের প্রধান শিমুল ভূঁইয়ার স্বীকারোক্তিতে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল প্রকাশ গ্যাস বাবুর যোগসূত্র পায়। গ্রেপ্তার হয় গ্যাস বাবু। আর গ্যাস বাবুর স্বীকারোক্তিতে রাজনৈতিক বেনিফিসিয়ারি খোঁজ পায় ঢাকা মহানগর ডিবি। গ্রেপ্তার হন মিন্টু।

এদিকে সীতাকুন্ড কালীমন্দির থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মোস্তাফিজকে রোগী ও ফয়সালকে সহায়তাকারি সাজানো হয়। ইজিবাইক চালক মোস্তাফিজকে ‘জিএস ফুড প্রোডাক্টস’ নামের একটি কোম্পানির প্রকৌশলী এবং ট্রাকচালক ফয়সালকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসাবে ভুঁয়া পরিচয় দেওয়া হয়।

গত ২৬ জুন সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে। এর পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাঁদের ছয় দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। গত মঙ্গলবার মোস্তাফিজ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর ছয় দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার ঢাকার আদালতে ফয়সাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

ডিবি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের পিএস মো. সিয়াম হোসেন এই দুজনের ভারতে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করেন। এই দুজনের পাসপোর্ট করার জন্য ভুঁয়া পরিচয় তৈরি করে দেন তিনি।

কলকাতায় যাওয়ার জন্য তাদের খুলনা থেকে ঢাকায় এনে পাসপোর্ট তৈরি করে দেন আক্তারুজ্জামান। এরপর ২রা মে ট্রেনে করে তাদের ভারতে পাঠান। তারা ভারতে গিয়ে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়ার কথা অনুযায়ী নিউমার্কেটের একটি হোটেলে ওঠেন। সেখান থেকে সঞ্জিবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে গিয়ে ১৩ই মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে হত্যা করেন। হত্যাকান্ডের আগে আনোয়ারুল আজীমকে অচেতন করতে চেতনানাশক ব্যবহার করেছিলেন ফয়সাল।

অন্যদিকে খুনের আগে আনোয়ারুলকে চেয়ারে বেঁধে ফেলার কাজটি যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যে মোস্তাফিজও ছিলেন । ১৯ শে মে দুজন ঢাকায় ফিরে আসেন এবং আখতারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে দেখা করেন। শাহীন তাদের পাসপোর্ট রেখে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। কিন্তু ওইদিনই শিমুল ভূইয়া, তার ভাইপো তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেয়ে তারা সীতাকুন্ড পাহাড়ে কালী মন্দিরে হিন্দু পরিচয়ে আত্মগোপন করেন। কিন্তু বিধি বাম। আনার খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ফয়সাল ও মোস্তাফিজ ডিবির জালে ধরা পড়ে যান ।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ.এম/ হাসনা

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ