বিএনএ ডেস্ক: আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সোমবার (৪ জুলাই) গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দলের নেতাকর্মীসহ কাউকে যেন কষ্ট না পেতে হয়, তা নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা নেতাকর্মী যেন কোন কষ্ট না পায়, দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী, বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কেউ আর হতদরিদ্র, গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত থাকবে না, সেজন্য সরকারের পদক্ষেপে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কোন এলাকায় যেন কোন একটা মানুষও গরিব না থাকে, ভিক্ষা করে খেতে যেন না হয়, কেউ যেন কষ্ট না পায়, তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীর এটা মাথায় রাখতে হবে যে, শুধু আমি খাবো, আমি ভালো থাকবো, আমি শান শওকতে থাকবো, আর আমার পাড়া প্রতিবেশি খাবে না-এটা যেন না হয়।
করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিগুণ আঘাতের কারণে বিশ্ব এখন এক সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে, এমন কি আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো বড় দেশগুলো এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে। আমরা এখনও ভালো অবস্থানে আছি এবং ভালো থাকার চেষ্টা করছি, এজন্য দেশবাসীর সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছু না কিছু উৎপাদন করে এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা রাখে তাহলে বাংলাদেশে কোন অভাব থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দিয়েছে এবং সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। যদিও দেশে-বিদেশে কিছু লোক আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন: ‘শেখ হাসিনার সরকারের দোষ কী? কী অপরাধে তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়?’ তৃণমূল কর্মীদের দলের লাইফলাইন হিসেবে উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের মাঠ কর্মীরা সব সময় কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারাই কিন্তু পার্টিটাকে ধরে রাখে এই কথাটা মনে রাখতে হবে।’ তিনি দলের নেতৃবৃন্দকে দলের প্রতিটি কর্মীর খোঁজ খবর নিতে এবং প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়াতে বলেন।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচল উদ্বোধনের পর বুধবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে সড়কপথে প্রথমবারের মতো গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার সমাধিসৌধে শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন এবং জাতির পিতা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞের অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী এর আগে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পদ্মা সেতুতে কিছু সময় কাটিয়ে জাজিরা পয়েন্টের সার্ভিস এলাকায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন।
প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময়কালে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই সেতু নির্মাণকালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে কেন নিজের টাকায় পদ্মা সেতু, সে কারণও ব্যাখ্যা করেন। বলেন, ’৭৫ এর পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা ক্ষমতায় এসেছে ‘খাওয়া পার্টি’ হিসেবে, দেয়ার জন্য নয়। আর আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে, মানুষের জন্য করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণের শক্তিই প্রধান শক্তি। যে কারণে তাঁর সরকার বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের পাশাপাশি বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর বেশ কয়েকবার সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলার প্রসংগ টেনে বলেন, তার জীবনের ওপর বারবার হামলা হয়েছে। কিন্তু, মহান আল্লাহ রক্ষা করেছেন কারণ তিনি দেশের কল্যাণে কিছু করতে চান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে যা কোভিড-১৯ ও বন্যা সফলভাবে মোকাবেলা করে প্রমাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিনামূল্যে জনসাধারণকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিয়েছে যা অনেক উন্নত দেশ করতে পারেনি।
শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এমপি এবং শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপির স্ত্রী শাহনা ইয়াসমিন শম্পা এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএ/ এ আর