29 C
আবহাওয়া
১২:২৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৩ (ঝিনাইদহ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৩ (ঝিনাইদহ-৩)


বিএনএ ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঝিনাইদহ-৩ আসনের হালচাল।

ঝিনাইদহ-৩ আসন 

ঝিনাইদহ-৩ এই আসনটি কোর্টচাঁদপুর এবং মহেশপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৮৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহিদুল ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯০ হাজার ২৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৫ শত ৪৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির শহিদুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৩ শত ৯১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর এ এস এম মোজাম্মেল হক। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৮ শত ৬১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহিদুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির শহিদুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহিদুল ইসলাম বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮ শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির শহিদুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৭ শত ২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর এ এস এম মোজাম্মেল হক। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৪শত ৫৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহিদুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯ শত ১৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৯ শত ২৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির শহিদুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৭ হাজার ২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাজ্জাতুজ জুম্মা । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ২ শত ৮৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ১ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯শত ৫২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৪ হাজার ৭ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর মতিয়ার রহমান। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৩ শত ১৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নবী নেওয়াজ বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮ শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৪৮ হাজার ৮ শত ৭৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নবী নেওয়াজ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ১ শত ৫ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কামরুজ্জামান স্বাধীন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১ হাজার ৪ শত ৬৫ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯ শত ১৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮০ হাজার ৮শত ৯০জন।

একাদশ জাতীয় সংসদে ঝিনাইদহ -৩ আসেন প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মতিয়ার রহমান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পাটির কামরুজ্জামান স্বাধীন, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সরোয়ার হোসেন, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর ইসমাইল হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪২ হাজার ৫ শত ৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মতিয়ার রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩২ হাজার ২ শত ৪৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর ও কোর্টচাঁদপুর) আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঝিনাইদহ-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩.৯৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৩৫%, বিএনপি ৪৩.৬৮%, জামায়াতে ইসলামী ৩১.৯২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.০৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৮২%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৮০%, বিএনপি ৩৭.২১%, জাতীয় পাটি ১.৪১%, জামায়াতে ইসলামী ৩১.৯৬ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬২% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৭১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৩৩%, ৪দলীয় জোট ৫৭.৭৬%, জাতীয় পার্টি ১.২৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৬৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.১৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৫.১৯%, ৪ দলীয় জোট ৩১.২১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২৩.৬০% ভোট পায়।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ, মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, মহেশপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামীদ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম মাস্টারে ছেলে ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদি হাসান রনি, কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল।

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মহেশপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা সারোয়ার হোসেন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-৩ সংসদীয় আসনটি এক সময় বিএনপির দুর্গ ছিল। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই আসনটি টানা বিএনপির শহিদুল ইসলামের একক নিয়ন্ত্রণে ছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ৪ বারের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামকে পরাজিত করে বিএনপির দূর্গ দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান। কিন্তু ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ নবী নেওয়াজ বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী বিহীন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।

জাতীয় পাটির কামারুজ্জামান স্বাধীন, বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নবী নেওয়াজের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক রয়েছে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত। বিএনপি চাইবে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৮৩তম ঝিনাইদহ- ৩ সংসদীয় আসনটিতে গনেশ উল্টেও যেতে পারে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ