34 C
আবহাওয়া
২:০০ অপরাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫২ (রাজশাহী-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫২ (রাজশাহী-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে রাজশাহী-১ আসনের হালচাল।

রাজশাহী-১ আসন 
রাজশাহী জেলার পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমিতে অবস্থিত গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা। এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-১ আসন। এটি জাতীয় সংসদের ৫২ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী-১ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ২ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩ শত ৮২ জন। নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৯ শত ৭৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মহসিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৮ শত ৯৭ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে এই আসনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক নির্বাচিত

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২ হাজার ৯৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ১ শত ২ জন। নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৯ শত ৯৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আলাল উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২১ হাজার ১ শত ৩৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩০ হাজার ৬ শত ৩১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ১ শত ৮৫ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩ শত ৩৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯ শত ৪৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭ শত ৮৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এনামুল হক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৯ হাজার ৪ শত ৫০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচিত হন

২০১৮ সালের ৩০শ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৪ শত ৩২ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক। হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল মান্নান, মই প্রতীকে বাসদের আলফাজ হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচিত হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩ হাজার ৪ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৮ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
রাজশাহী- ১ আসনটি ভিআইপি আসন খ্যাত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে অসংখ্য প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন। দুই দলে রয়েছে গ্রুপিং ,বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে রয়েছে একাধিক গ্রুপ।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন টানা তিনবারের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, সাবেক ডিআইজি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মতিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির স্ত্রী আয়শা আখতার ডালিয়া ও জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিয়া মাহি।
আরও মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধী সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বদরুজ্জামান, সহসভাপতি মকবুল হোসেন খান, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আতাউর রহমান খান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি মতিউর রহমান, রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি আবদুল ওহাব ও তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র ও যুব নেতা একেএম আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহীজেলা কৃষক লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ তাজবুল ইসলাম।
বিএনপির থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহী-১ আসনের তিনবারের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই ও বিএনপি সরকারের সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব) শরিফ উদ্দিন শরিফ, জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনি ও যুক্তরাষ্ট প্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শাহীন।

নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাপসৃষ্টি করছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে প্রার্থী করতে চায় নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটি।

এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন বিশ্বাস। বাসদ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী আলফাজ হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল মান্নান দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকবেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী- ১ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর রাজশাহী-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৩৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.৭১%, বিএনপি ৪২.৯২%, জাতীয় পার্টি ১.৪৬%, জামায়াতে ইসলামী ২৫.৯১% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.১৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.২৩%, বিএনপি ৪৭.৭০%, জামায়াতে ইসলামী ১৬.১৬%, জাতীয় পাটি ৩.৯৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৬২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.০৭%, ৪দলীয় জোট ৫৯.০৭%, জাতীয় পার্টি ২.২৭%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.৪১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫২.৮৫%, ৪ দলীয় জোট ৪৬.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৫৪% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী- ১ আসনটি বিএনপি ও জামায়াতের দূর্গ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ বিএনপির দূর্গে আঘাত হানে। কিন্তু ক্ষমতার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের অন্তদলীয় কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। বিএনপির মধ্যে অন্তকোন্দল থাকলেও তা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব নেই এই আসনে। জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকলেও, আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারাতে তাদের কর্মী সমর্থকরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এতে লাভবান হবে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের -৫২ নম্বর রাজশাহী-১ আসনটির দখল হারালে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ