বিএনএ, ঢাকা : করোনার সংক্রমণ রোধে সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।তবে পণ্যপরিবহন, জরুরি সেবা, জ্বালানি, ঔষধ, পচনশীল, ত্রাণবাহী পরিবহন, সংবাদপত্র, গার্মেন্টস সামগ্রী এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।রোববার (৪ এপ্রিল) রাজধানীতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (৩ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউনের ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া শনিবার (৩ এপ্রিল) লকডাউনে জরুরি খাদ্যবাহী ট্রেন ছাড়া সব প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের কথা জানান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গত বছরের মতোই লকডাউনে শুধু পণ্যবাহী মালগাড়ি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনে ঠিক যত দিনের জন্য লকডাউন জারি হবে, তত দিনই যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে না।
এ দিকে লকডাউন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, আমরা সাতদিন যদি সবাই শক্তভাবে পালন করতে পারি তাহলে এটি দারুণভাবে কাজ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে আমরা অন্তত সাতদিন এটি করতে থাকি। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে যা ভালো হয় সে সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে। আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করব।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ
এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটনকেন্দ্র। বাতিল করা হচ্ছে হোটেল-মোটেলে আগাম নেওয়া বুকিং। পাশাপাশি নতুন বুকিংও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্ধ থাকবে দোকানপাট-শপিংমল
লকডাউনের সময় দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান টিপু এ বিষয়ে বলেন, লকডাউনের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের মানতেই হবে। কারণ দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো না। তাই আগামী ৫ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। তবে আমাদের দাবি এই লকডাউন এক সপ্তাহের বেশি যেন না বাড়ে।
পোশাক ও শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকবে
লকডাউনের বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, লকডাউনে জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু খোলা থাকবে। এছাড়া পোশাক ও শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকবে। কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরার বিষয় থাকে। এতে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। তবে কারখানায় শ্রমিকদের একাধিক শিফটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে।
এ দিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত সোমবার (২৯ মার্চ) সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো—
১. সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ যেকোনো উপলক্ষে জনসমাগম সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে উচ্চ সংক্রমণ এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে।
২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
৩. পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করা হবে।
৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আন্তজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ করতে হবে।
৬. বিদেশফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা ও উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
১০. দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
১১. অপ্রয়োজনে রাত ১০টার পর ঘর থেকে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাস্ক না পরলে বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৩. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা করোনার লক্ষণ রয়েছে—এমন ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ লোকবল দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থ, ৫৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তিদের বাসায় থেকে কাজের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজন করতে হবে।
১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয়—এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
১৭. হোটেল, রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার অর্ধেক মানুষ প্রবেশ করতে পারবে।
১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবস্থানের পুরোটা সময়ই বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বিএনএনিউজ/জেবি, ওজি