১৬ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলায় যে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, তার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন অলি আহাদ। উক্ত সমাবেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববঙ্গ আইন-পরিষদ ভবনমুখে অগ্রসর হয় এবং সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ বিক্ষোভে অলি আহাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৮ সালে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর প্রথম ঢাকা আগমন উপলক্ষে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের যে-সব নেতৃবৃন্দ আন্দোলনে গতি-প্রকৃতি কৌশল নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন, অলি আহাদ তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। ২৪ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে জিন্নার সাথে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আলোচনার জন্য যে প্রতিনিধি দল গমন করেন অলি আহাদ সে দলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের বিস্ফোরণ পর্বে অলি আহাদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঐ সময় মিছিল, মিটিং, সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচিতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারির পর ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিচ্ছিন্নভাবে যেসব সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে, সেগুলোর অনেকটিতেই অলি আহাদ উপস্থিত থেকেছেন এবং বক্তব্য রেখেছেন।
২১ ফেব্রুয়ারি আমতলার সভায় উপস্থিত থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে গোলাম মাওলাকে আহ্বায়ক করে যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় সে ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২২ তারিখ গায়েবানা জানাজা শেষে যে জনসভা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে অলি আহাদ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের কারারুদ্ধ কর্মী আজমল হোসেনের কক্ষে সর্বদলীয় পরিষদের যে বৈঠক হয় সেখানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের ব্যাপক দমননীতির ফলে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই ভাষা-আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। এমনিক্ষণে আন্দোলনকে পুনরায় উজ্জীবিত করার কৌশল নির্ধারণের জন্য ৭ মার্চ ১৯৫২ তারিখের ভাষা-আন্দোলনের কিছু সংখ্যক নেতৃবৃন্দ ঢাকার শান্তিনগরে একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হন। অলি আহাদ তাতেও অংশগ্রহণ করেন। ঐ সময় অন্যদের সাথে তিনিও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন।
রাজনীতিবিদ, ভাষাসংগ্রামী অলি আহাদ ভাষা-আন্দোলন ও সমকালিন রাজনীতি নিয়ে ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫’নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(৩) অলি আহাদ