বিএনএ, চবিঃ বসন্ত উঁকি দিচ্ছে দরজায়। সকালে ঘুম ভাঙে শাটল ট্রেনের শব্দে। চারিদিকে সাজ সাজ রব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সেজেছে নতুন সাজে। কুয়াশা মাড়ানো শীতের সকালে রঙিন সাজে সবাই এক মিলনমেলার দিকে পদযাত্রা শুরু করেছে। তাদের গন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। তাদের কেউ কিশোর, কিশোরী কেউ বয়ো:বৃদ্ধ কেউবা আবার মধ্যবয়সী। তাদের অনেকে এসেছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে, অনেকে আবার নাতি নাতনিকে সঙ্গী করে। শহীদ মিনারে পৌঁছাতেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরছে পুরনো বন্ধুকে। তাদের অনেকেই আবার পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে। মজে যাচ্ছে গল্পে আড্ডায়, ফিরে যাচ্ছে পুরোনো জীবনের স্মৃতিচারণে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে শনিবার(৪ ফেব্রুয়া এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে।
বিভাগটির ১০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.শহিদ ব্যাংকে চাকরি করতেন, এখন অবসরে। প্রায় দুইযুগ পরে এসেছেন স্ত্রী, নাতি নিয়ে। বসে আছেন পুরনো বন্ধুর সাথে। দাঁড়ি, চুল দুটোই পেকেছে। আজকের দিনটি কেমন লাগছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হাসি দিয়ে বলে খুব ভালো লাগছে। নাতিরা খেলছে ঘুরে বেড়াচ্ছে এর মতো আনন্দ আর হয় না। পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। সবকিছুর পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়নি স্মৃতিতে থাকা পুরোনো দিনগুলোর।
সুবর্ণজয়ন্তীর এই অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি দেখা যায় বিভাগের প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে বর্তমান ব্যাচের প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে।
এটিকে কেন্দ্র করে বুদ্ধিজীবী চত্বরে বিভিন্ন ধরনের স্টলের উপস্থিতি দেখা যায়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন, তাদের মধ্যে কেউ ব্যাংকার,কেউ সরকারি অফিসার কেউ ব্যবসায়িক কেউবা শিক্ষক।
“সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ম্যানেজমেন্ট পঞ্চাশে” প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত এই সুবর্ণজয়ন্তী এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নবীন, প্রবীণদের এ মিলনমেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সাবেক উপাচার্যের উপস্থিতিতে বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। দিনব্যাপী চলে এই মিলনমেলার কয়েকটি পর্ব। এর মধ্যে ছিলো, প্রয়াত শিক্ষক ও বন্ধুদের স্মারণে ১ মিনিটের নিরবতা, স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য, আমন্ত্রণ অতিথিদের বক্তব্য।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে ও চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী সহ আরো অনেক সম্মানিত অতিথি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ অন্যতম একটি সমৃদ্ধ বিভাগ। এ বিভাগটি ৫০ বছর অতিক্রম করে আজ সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন করছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এ বিভাগের প্রতিথযশা শিক্ষকবৃন্দ নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে বিগত ৫০ বছরে দেশে আলোকিত মানবসম্পদ উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং এক্সিকিউটিভ তৈরিতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ স্মৃতিচারণ করে বলেন, এই বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সনামধন্য একটি বিভাগ। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এই বিভাগ সূচনা থেকে তার প্রতিটি কার্যক্রমে পূর্বেও যেমন সফলতা দিয়েছে এখনো এ ধারা অব্যাহত। এই বিভাগের আরো উন্নতির জন্য প্রাক্তনদের বেশি করে কাজ করতে হবে। যাতে দেশ ও জাতির উন্নয়নে এ বিভাগের আরও অবদান রাখতে হবে।
বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন সভাপতি আধ্যপক ড. এ এফ.এম. আওরঙ্গজেব বলেন, ২৮ বছর আমি এই বিভাগে অধ্যাপনা করেছি। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটা বিশেষ গুণ এরা কেউ বেকার থাকে না। আমরা এই বিভাগ থেকে নেতা ও নেতৃত্ব তৈরি করি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, চবি’র সাবেক উপাচার্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান, চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর (ডেপুটেশন) ইউজিসি এর সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের, চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর চবি’র সাবেক উপাচার্য আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন এবং চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. জাহেদ হোছাইন সিকদার, প্রফেসর এ এন আর এম বোরহান উদ্দিন, প্রফেসর ড. আবদুল আউয়াল খান ও প্রফেসর ড. মোঃ ফসিউল আলম প্রমুখ।
বিএনএ/ সুমন বাইজিদ,ওজি