নিজস্ব প্রতিবেদক : জিঙ্কসমৃদ্ধ পাঁচটি জাতের পর এবার চিকন চালের জাত নিয়ে আসছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রির বিজ্ঞানীরা। ব্রি-৬২, ব্রি-৬৪, ব্রি-৭২, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪ এরপর এবার জিঙ্কসমৃদ্ধ নতুন জাত ব্রি-১০০ উদ্ভাবন করেছেন তারা। যে ধানের চাল হবে আরো চিকন, ভাত হবে ঝরঝরে।
ব্রির বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্যান্য ধানের তুলনায় এই ধানের ফলন যেমন বেশি, তেমনিভাবে জিঙ্কের পরিমাণও থাকছে বেশি। উৎপাদনশীলতা পাশাপাশি জিঙ্ক-আয়রণ সমৃদ্ধ ধানের উৎপাদন বাড়িয়ে ভাতের পুষ্টি গুণাগুণ বাড়াতে ব্রির ১৪ বছরের চলমান গবেষণার সর্বশেষ সাফল্য এটি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি ইতোমধ্যে ব্রি ধান-১০০ কে অনুমোদন দিতে জাতীয় বীজ বোর্ডকে সুপারিশ করেছে।
ধানের এই নতুন জাত অনুমোদন পেলে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বীজ উৎপাদন শুরু করবেন। বাণিজ্যিকভাবে এ জাত বাজারজাত করা হবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসির মাধ্যমে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ এই বোরো ধান থেকে অল্প দিনেই ফলন পাওয়া সম্ভব; যা আগামী বর্ষার আগেই ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
ব্রি-১০০ ধানের সঙ্করায়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য ও চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল কাদের বলেন, ‘২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) ফলাফল সন্তোষজনক আসে। তখন জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশে ধানের জাত হিসাবে ছাড়করণের জন্য আবেদন করা হয়। ব্রি ধান-১০০ এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অঙ্গজ অবস্থায় গাছের আকার ও আকৃতি ব্রি ধান-৭৪ এর মত। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্থ ও লম্বা, পতার রং সবুজ। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০০ সেন্টিমিটার। গড় জীবনকাল ১৪৮ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৬.৭ গ্রাম। চালের আকার আকৃতি মাঝারি চিকন এবং রঙ সাদা। ভাত হয় ঝরঝরে। ব্রি-১০০ ধানের প্রতি কেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম। দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬.৮ শতাংশ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্রি ধান-১০০ এর জীবনকাল ব্রি ধান-৭৪ এর প্রায় সমান। ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধান ব্রি-৭৪ এর জীবনকাল ১৪৫-১৪৭ দিন। ব্রি-১০০ এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। ব্রি-৭৪ এর চেয়ে ব্রি-১০০ ধানের গুণগত মান ভালো, অর্থাৎ চালের আকৃতি মাঝারি চিকন এবং ব্রি ধান-৮৪ এর চেয়ে ফলন প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি।’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক পরিমল কান্তি বিশ্বাস এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই ফর্টিফাইড জাতগুলো থেকে প্রত্যাশা অনেক। এ ক্রপগুলোতে যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো আছে, তা শিশুদের বেড়ে উঠার জন্য ও ল্যাকটেটিং মাদারদের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের দেশে সাধারণত ভাতের ওপর নির্ভরতা বেশি। নানা খাবার খেলেও দিন শেষে সেই ভাতের চাহিদাই কিন্তু বেশি। তাই ভাতের দিকে আলাদা নজর রাখতেই হবে, যেন এই ভাতের মাধ্যমে জিঙ্ক, আয়রনের মত পুষ্টি উপাদান দেয়া যায়।’
অধ্যাপক পরিমল কান্তি আরো বলেন, ‘এই ধানটি সব জায়গায় আবার চাষ করা যাবে না। চাষ করতে হবে মাঝারি নিচু জমিতে। যেখানে ভালো সেচ সুবিধা আছে, সেখানে চাষ করতে হবে। তবে এটা ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ এর যে জমি আছে, সে জমিতেই চাষ করা যাবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, ‘আমরা জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানটির বিষয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করব। এখানে ধানটির গুণাগুণ, চাষাবাদ পদ্ধতি ও পোকামাকড় আক্রমণের সম্ভাবনা কেমন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে তারপর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যাব।