বিএনএ, ময়মনসিংহ: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) দুই বছর মেয়াদি ছয় সদস্যবিশিষ্ট নতুন সিন্ডিকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য হয়েছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ.এস.এম. কাসেম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এছাড়া, সিন্ডিকেট কমিটিতে মনোনীত সদস্যরা হলেন, ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বাহানুর রহমান, কৃষি অনুষদের ডিন ড. জি.এম. মুজিবুর রহমান, মাল্টিমোড গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শেখ এ.কে. মতাহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. রাকিব উদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মইনুদ্দীন আহমদ এবং কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের সদয় অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ১৬(৪) ও (৫) ধারা এবং প্রথম সংবিধির ২ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সদস্য হিসেবে দুই বছরের জন্য মনোনয়ন প্রদান করা হলো।
সুত্র জানায়, ড. মো. আবুল কালাম আজাদ ২ জুন ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে যোগদান করেন। মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে তিনি অত্র ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস, গ্রেড-২) পদে ৩০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত হন ও ৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে সিনিয়র সিলেকশন বোর্ড কর্তৃক উক্ত পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস) হিসাবে যোগদানের পূর্বে তিনি প্রায় ২৫ বছর বিনা’র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ ১ জুন ১৯৯৪ সালে উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ও একই বিভাগে ২০০১ সালে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ২০০৯ সালে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে উম্মুক্ত প্রতিযোগীতার মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করেন। ২০১৫ সালে তিনি বিনা’র বায়োটেকনোলজি বিভাগে একইভাবে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। অল্প সময়ের জন্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
এখন পর্যন্ত তিনি ধান, গম, পাট, চিনাবাদাম ও পেঁয়াজের ২৪টি জাত উদ্ভাবনের সাথে প্রধান গবেষক/সহযোগী গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। তার উদ্ভাবিত জাতসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বাশমতি টাইপ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চাল ও স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন (১৩৫-১৪৮দিন) উচ্চ ফলনশীল (সর্বোচ্চ ৮.০ টন/হে.) বোরো ধানের জাত বিনা ধান২৫; খরা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯; উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল নাবী বোরো ধানের জাত, বিনাধান-১৪; জিংক ও আয়রন সমৃদ্ধ আমন ধানের জাত বিনাধান-২০; কৃষক ভাইদের কাছে চিনাবাদামের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত বিনাচিনাবাদাম-৪; লবণ সহিষ্ণু চিনাবাদামের জাত বিনাচীনাবাদাম-৬, বিনচিনাবাদাম-৮সহ চিনাবাদামের মোট ১২টি জাত তার হাত দিয়েই এসেছে। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম লবণ সহিষ্ণু গমের জাত বিনাগম-১ অবমুক্ত করেন।
ইন্ডিয়ান জেআরও-৫২৪ নামক তোষা পাটের বীজে গামা রশ্মি প্রয়োগ করে তিনিই প্রথম বাংলাদেশের উপযোগী করে বিনা তোষাপাট১ জাতটি উদ্ভাবন করেন। বিনা উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত বিনা পিঁয়াজ-১ ও বিনাপিঁয়াজ-২ এর ও তিনি উদ্ভাবক।
এছাড়াও তিনি মাত্র ৪ (চার) বছরে নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের পদ্ধতি অবিষ্কারসহ যে সমস্ত ফসল শুকনা মাটিতে জন্মায় সে সমস্ত ফসলের লবণাক্ত মাটিতে জন্মানো উপযোগী জাত উদ্ভাবনের পদ্ধতিও আবিষ্কার করেন।
তিনিই প্রথম জাতির সামনে উপস্থাপন করেন যে, আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে জমিতে সরিষা চাষ; ধানের কুড়া হতে ভোজ্য তেল নিষ্কাষণ ও লবণাক্ত জমিতে চিনাবাদাম ও তিল উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাশেকে ভোজ্য তেলে রপ্তানীকারক দেশ হিসাবে রুপান্তর করা সম্ভব।
এছাড়াও গামা রশ্মি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতির সিংহভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। তারই মতামতের ভিত্তিতেই বিনা’র আঞ্চলিক কেন্দ্র, গাজীপুরে ৫০০ কিলো কিউরি ক্ষমতাসম্পন্ন গামা ইরাডিয়েটর যন্ত্র স্থাপিত হতে যাচ্ছে। তাছাড়াও উক্ত কাজের জন্য একই স্থানে ইলেক্ট্রন বিম যন্ত্র স্থাপনের নিমিত্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইলেক্ট্রন বিম রিসার্স সেন্টারের সাথে সম্ভাব্যতা যাচাই এর কাজে ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএনএনিউজ/ হামিমুর রহমান হামিম/ বিএম/এইচমুন্নী