27 C
আবহাওয়া
১২:৪৩ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » জেলহত্যা দিবস: ৪৮ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

জেলহত্যা দিবস: ৪৮ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

জেল

বিএনএ ডেস্ক: আজ ৩ নভেম্বর; বাঙালি জাতির জীবনে শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার আড়াই মাসের মাথায় ১৯৭৫ সালের এই দিনে তাঁরই ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও প্রথম অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলীকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে যারা খুন করেছিল, সেই বিপথগামী সেনাসদস্যদের একটি গ্রুপ এই চার নেতাকে ঢাকার তৎকালীন কেন্দ্রীয় কারাগারে (বর্তমানে জাদুঘর) ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকাবস্থায় এমন হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেই থেকে প্রতিবছর এই দিনটি জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে চার জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলার আসামিদের বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ খুনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে। অন্যদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই রাষ্ট্রপক্ষের কাছে। পলাতক থাকা এ দুই মামলার আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরে ২০১০ সালের ২৮ মার্চ এ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে সরকার; যার নেতৃত্বে রয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী খন্দকার মোশতাক। পরে সে রাষ্ট্রপতি হয়। খুনিচক্র মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং মুক্তিযুদ্ধের ওই চার সংগঠক বেঁচে থাকলে তাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এ কারণেই জাতীয় চার নেতাকে ঢাকার তৎকালীন কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পরদিন তৎকালীন ডিআইজি (প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর কলঙ্কিত এ হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর জেলহত্যা মামলায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায়ে আসামি তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো– রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো– খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, এ কে বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিন। এ ছাড়া রায়ে সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়। পরে আসামিপক্ষের করা আপিলের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও অপর দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেন।

এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেন। রায়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেওয়া তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।

অবশ্য এর আগে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করে সরকার। তারা হলো– সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন। এদের মধ্যে মহিউদ্দিন ছাড়া অন্য চারজন জেলহত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।

এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল পলাতক আবদুল মাজেদকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করা হয়; যদিও সে জেলহত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ছিল। দণ্ডিতদের মধ্যে তিনজন মৃত্যুদণ্ড ও সাতজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে পাঁচজন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও দণ্ডপ্রাপ্ত। বর্তমানে পলাতক অন্য আসামিরা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ