29 C
আবহাওয়া
১২:২০ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৬ (গাজীপুর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৬ (গাজীপুর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৬ (গাজীপুর-৩)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে গাজীপুর- ৩ আসনের হালচাল।

গাজীপুর- ৩ আসন 

গাজীপুর- ৩ সংসদীয় আসনটি গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গঠন করা হয় গাজীপুর-৩ আসন। তখন শ্রীপুর উপজেলার সঙ্গে যোগ করা হয় সদরের মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন। এটি জাতীয় সংসদের ১৯৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আফসার হোসেন মোল্লা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২ হাজার ৮ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আফসার হোসেন মোল্লা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৩ শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হাবিব জামান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ২ শত ৩৩ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ফজলুল হক মিলনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির ফজলুল হক মিলনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৭ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৪ হাজার ৬ শত ২৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৫ শত ২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফজলুল হক মিলন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৮ শত ৩৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ফজলুল হক মিলন বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৪ শত ২৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির ফজলুল হক মিলন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৫ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ১ শত ৩৩ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রহমত আলী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৪ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩ শত ৮৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রহমত আলী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯ শত ৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম এ মান্নান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৯ শত ১৫ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রহমত আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রহমত আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭ শত ৬০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ইকবাল সিদ্দীকি, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আফতাব উদ্দীন আহমেদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রহমত উল্লাহ, মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের এস এম মফিজ উদ্দীন আহমদ, ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডারেশনের রফিকুল ইসলাম এবং গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির নাছির উদ্দীন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩ শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইকবাল সিদ্দীকি। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৭ হাজার ৯ শত ৮৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর গাজীপুর- ৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজীপুর- ৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.৯১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.৫৩%, বিএনপি ২৫.৫০%, জাতীয় পাটি ৮.০৭% জামায়াত ইসলামী ১৭.২৭ %স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৯.৬৩%ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.১৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৫২%, বিএনপি ৩২.৫৮% জাতীয় পাটি ২০.৮৩%, জামায়াত ইসলামী ৫.৯২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.১৫%ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৩৭ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.৯৫%, ৪ দলীয় জোট ৪৭.২৬%, জাতীয় পার্টি ৫.২০ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৭.৫১%, ৪ দলীয় জোট ৩১.০৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৪৬% ভোট পায়।

গাজীপুর- ৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত রহমত আলীর ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামিল হাসান দুর্জয়, মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রোমানা আলী টুসি।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ, শ্রীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম ও ব্যবসায়ী আতিকুল্লাহ বাবুল। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মণ্ডল।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাজীপুর- ৩ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ষষ্ট সংসদ নির্বাচন ছাড়া ১৯৯১ সালে থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হয়েছেন প্রয়াত রহমত আলী। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ইকবাল হোসেন সবুজ। বর্তমানে আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপে বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রয়াত রহমত আলীর ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় ও মেয়ে রোমানা আলী টুসি। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ। যা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যা নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। দলীয় কোন্দলের কারণে এই আসনে নির্ভার নেই আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী নয়। ২০০৮ সীমানা পুনর্নির্ধারণের আগে তৎকালীন গাজীপুর-১ আসন থেকে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সংসদ এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ের দেখা পেয়েছিল বিএনপি। সেই নির্বাচনে বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী নির্বাচিত হন। আসন পুনর্বিন্যাসের পর থেকে এই আসনে বিএনপি নেতৃত্বের সংকটে পড়ে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছো। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম কাগজে কলমে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৯৬তম সংসদীয় আসন (গাজীপুর- ৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহেনা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৫ (গাজীপুর-২)

Loading


শিরোনাম বিএনএ