বিএনএ, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘গেস্ট রুমে’ ডেকে নিয়ে গিয়ে সংবাদ কর্মীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ৮ কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের নাম ছাত্রলীগ নিজেই প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
রাতেই প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রুম থেকে ডেকে এনে নিজের ও বন্ধুদের পরিচয় দিতে বলা হয় ওই সাংবাদিককে। পরিচয় পর্ব শেষে রুমের সিলিং ধরে নির্দিষ্ট সময় ঝুলে থাকতে বলা হয় তাকে। বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার আগেই ওই সাংবাদিক নেমে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে টেবিলের নিচে মাথা দিতে বলা হয় তাকে। কিন্তু এতেও তিনি অপারগ হলে ক্ষুব্ধ হয়ে যায় নির্যাতনকারীরা।
নির্যাতিত শিক্ষার্থী বলেন, ‘রুম থেকে গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে আমাকে সিলিং ধরে ঝুলতে বলা হয়, টেবিলের নিচে মাথা দিতে বলা হয়। আমি বাধ্য হয়ে ঝুলেছি। কিন্তু টেবিলের নিচে মাথা দিতে পারিনি।’
‘এক পর্যায়ে আমাকে তারা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করছি কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের কাছে ফোনটা দিতে বলে। লক খুলে দিতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। পরে তারা আমার শার্টের কলার ধরে অনেকে মিলে আমার ওপর আক্রমণ করে। তারা আমার ফোন অনেকক্ষণ আটকে রাখে।
এ ঘটনার পরপরই সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তারা সেখানে নির্যাতিত ও নির্যাতনকারীদের কথা শুনেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজামান সোহেল প্রাথমিকভাবে ‘ক্রস চেক’ করে নির্যাতনকারী হিসেবে ৮ জনের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন- ৪৬তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্ ও ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।
‘ক্রস চেক’ করে নামগুলো পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। তাদেরকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে স্বীকার করে সংগঠন থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আজ থেকে এই কর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকুক তা আমরা চাই না। সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে তারা অবাঞ্ছিত বলে গণ্য হবেন। তারা এই কমিটি থাকা অবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত থাকবেন না এবং আগামী কমিটিতেও তাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই।’
ছাত্রলীগের করা ‘ক্রস চেকিং’ এর বিষয়কে সাধুবাদ জানাতে পারেনি ওই লিস্টে নাম আসা শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ৮ শিক্ষার্থীর একজন বলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে আমার নাম বললো ছাত্রলীগ? তারা তো আমার কাছ থেকে কিছু জানতে চাইলো না। বিষয়টা একপাক্ষিক হয়ে গেছে।’
প্রায় ৩ ঘণ্টা এমন পরিস্থিতি চলার পরও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, আবাসিক শিক্ষক ও সহকারী আবাসিক শিক্ষককে সেখানে দেখা যায়নি। ফোন দিলেও তারা তখন ফোন ধরেননি।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)-কে বলেন, ‘আমরা আজকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় হল কমিটি এ বিষয়ে বসবো। তারপর অভিযুক্তদের নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘এ ব্যাপারে হল প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম বলেন, ‘অভিযোগ পত্রের ভিত্তিতে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো। আমরা হল প্রশাসনকে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছি
বিএনএ/সানভীর, এমএফ