বিএনএ,চট্টগ্রাম: মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গবেষকদলের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কাছে। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) চসিকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয় চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ওমর ফারুক গবেষণাটি করেন।
প্রতিবেদনে নগরীর ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করে ৫৭টি স্পট থেকে নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষা করে ১৫টি স্পটে শতভাগ এডিসের লার্ভা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চবির গবেষকরা। একইসঙ্গে মশা থেকে রক্ষা পেত শুধু রাসায়নিকের উপর নির্ভর নয়, সঙ্গে জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে সুপারিশ করেছেন তারা।
যেসব স্পটে মিলল:
নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা মসজিদের পাশে, চান্দগাঁও ফরিদা পাড়া, কল্পোলোক আবাসিক এলাকার রোড় নং ১, ডিসি রোডের বাদশা মিয়া সওদাগর বাড়ি, ডিসি রোডের তুশার কলোনি, চাক্তাই প্রাইমারি স্কুলের পাশে, সদরঘাট থানার রেলওয়ে কলোনি, পশ্চিম মাতারবাড়ি মাঝিরঘাট রোড, আমবাগান বাস্তুহারা কলোনি, ১৩ নম্বর রেলওয়ে কলোনি, পাহাড়তলীর দুলালাবাদের সিডিএ মার্কেট, সাগরিকার জেলে পাড়া, সাগরিকার রুপালি আবাসিক এলাকার দক্ষিণ কলোনিতে, হালিশহর এ ব্লকে ও ফইল্লাতলী বাজারের দক্ষিণ কলোনিতে।
চসিক জানায়, গবেষণা প্রতিবেদনে লার্ভিসাইডের (মশার ডিম নষ্ট করার ওষুধ) সঙ্গে ডিজেল মিশিয়ে স্প্রে করলে মশা দ্রুত মারা যাবে। চসিকের পর্যাপ্ত লার্ভিসাইড ওষুধ ও কালোতেল রয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নতুন এডাল্টিসাইড (উড়ন্ত মশা মারা ওষুধ) কেনা হবে। ইতোমধ্যে নতুন করে ১০টি টু স্ট্রোক লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানোর মেশিন কিনেছে।
চবির গবেষণার বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ফগার মেশিন দিয়ে এত ওষুধ ছিটানোর পর চট্টগ্রামের নাগরিকেরা বলেন, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। এরপর চিন্তা করলাম ওষুধের কার্যকারিতা নির্ণয়ের। চবি উপাচার্যকে অনুরোধ জানাই, মশার ওষুধ নিয়ে গবেষণার জন্য। আজ সেই কাজের প্রতিবেদন সবার সামনে উপস্থাপিত হলো।
মেয়র বলেন, একটি স্প্রে মেশিনের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি দাম ফগার মেশিনের। এ মেশিনের পরিবর্তে যে স্প্রে মেশিন ব্যবহার করতাম তা নিয়ে এগিয়ে গেলে অনেক বেশি সুফল পাব। স্প্রে মেশিন সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করি। ফগার মেশিন দিয়ে যে ওষুধ ছিটানো হয় তার কার্যকারিতা নগন্য। লার্ভিসাইড এডাল্টিসাইড মেশিন দিয়ে ওষুধ স্প্রে করলে বেশি সুফল পাব।
তিনি বলেন, এখন আমরা আশ্বস্ত হতে পেরেছি কোন ওষুধ ব্যবহার করলে মশা মারতে পারব। আগে বছরের পর বছর মশার ওষুধ ব্যবহার করেছি কিন্তু আন্দাজে ব্যবহার করেছি। হয়তো কখনো বেশি ওষুধ ব্যবহার করেছি, কখনো কম ব্যবহার করেছি। পুরোপুরি সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আজ একটি যুগান্তকারী দিন। আমরা একটু স্বস্তি পাচ্ছি- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পথ দেখিয়েছেন মশকনিধন ও ওষুধের কার্যকারিতার বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা দিয়েছেন। সেই ধারণা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিদুল আলমের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন উপস্থাপন সভায় বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী, শৈবাল দাশ সুমন, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, চবি গবেষণা টিমের আহবায়ক সহযোগী অধ্যাপক রবিউল হাসান, ড. মো. ওমর ফারুক, ড. তাপসী বোস, ড. এইচ.এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ। চবি গবেষণা টিমের আহবায়ক অধ্যঅপক রবিউল হাসান প্রতিবেদনটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন করেন।
বিএনএনিউজ/মনির