বিএনএ,চট্টগ্রাম: কর্ণফুলীর নদীর দক্ষিণ পাড় কর্ণফুলী উপজেলায় গড়ে ওঠেছে শত শত ডেইরী খামার। এসব খামারে অধিকাংশেই দুধের জন্য ফ্রিজিয়ান গরু রাখা হয়। আর এসব দুগ্ধজাতের গরুর অন্যান্য খাদ্যের পাশাপাশি খাবার হচ্ছে উন্নত মানের ঘাস। এই উপজেলায় ডেইরী খামার বেশি হওয়ায় এখানে এসব ঘাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ কৃষক ধান চাষ বাদ দিয়ে নেপিয়ার ঘাস চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে নেপিয়ার ঘাস চাষে ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা । যদিও যে জমিতে একবার ঘাস চাষ করা হয়। সে জমিতে পুনরায় ধান চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিন বছর ধরে ঘাস উঠতে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিবিদরা।
ডেইরী খামার এসোসিয়েশন সূত্র জানায়, উপজেলায় তিন শতাধিক গরুর খামারে গবাদিপশু রয়েছে। এসব গবাদি পশুর খামারগুলোতে গো-খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে, উপজেলার বিঘা বিঘা জমিতে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাসের চাষাবাদ করছে কৃষক ও খামারিরা।
দেখা যায়, কর্ণফুলীর চরলক্ষ্যা, শিকলবাহা, জুলধা, বড়উঠান ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ঘাসের ক্ষেত রয়েছে প্রচুর। যে খোলা মাঠে ধান চাষ দেখার কথা সেখানে সব ঘাসের বিচরণ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ধানের মাঠ। আসলে সবই ঘাস। ঘাস চাষিদের দাবি এতে তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা আসছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাষাবাদে ঝামেলা কম। লাভ ও বেশি হওয়ায় তাঁরা ঘাসের চাষ করছেন। বিগত ৯ বছর ধরে শুধু এ ঘাসের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।
সূত্রে জানা গেছে, মিল্ক ভিটার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে কর্ণফুলীতে গাভীর খামার স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। দুধের মোটামুটি ভালো দাম পাওয়ায়, নতুন নতুন খামার গড়ে তুলেছেন। এ কারণেই উপজেলায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় নেপিয়ার ঘাসের চাষ। এছাড়াও ধানের দাম না পাওয়াও একটা কারণ বলে উল্লেখ করেছেন চাষীরা।
কৃষকরা বলছে, নিজেরাই নেপিয়ার ঘাসের চারা রোপণ করি এবং ঘাসের ফলন ভালো হচ্ছে দেখে ঘাস চাষ শুরু করি। তারচেয়ে বড় কথা আমাদের এখানে চারপাশে ঘাস চাষ হয়। ধান চাষ করলেও পোকায় নষ্ট হয়ে যায়।
মো. হারুন নামে শিকলবাহার এক কৃষক বলেন, ‘আমরা গরু পালন করি তাই ঘাস চাষ করি। বহু বছর যাবত করছি। এক বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চারা রোপণ করে বেশ লাভবান হই। এরপর থেকে আস্তে আস্তে ১৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করি। বছরে নেপিয়ার ঘাসের জমি থেকে ৭-৮ বার ঘাস কাটা হয়।
তিনি আরো জানান, এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় তিনি লাভ করেছেন ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এ ঘাসের চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সার, কীটনাশক ও মজুরি কম লাগে, উৎপাদন করে লাভও বেশি হয়। তাই ধান বাদ দিয়ে ঘাস চাষের দিকে ঝুঁকছে স্থানীয় চাষীরা এমন মন্তব্য করেন তিনি।
কর্ণফুলীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুম্মান তালুকতার জানান, মায়ের দুধের যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি গবাদি প্রাণী পালনে উন্নত জাতের ঘাস চাষের কোনো বিকল্প নেই। ঘাস দুগ্ধ বৃদ্ধিসহ প্রাণীরোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সে সাথে আর্থিকভাবেও লাভবান তো হয়েছে। কর্ণফুলীতে যে পরিমাণ গরুর খামার রয়েছে এসব খামারীদের প্রয়োজনে তাঁরা নিজেরাই নেপিয়ার ঘাস চাষ করে। আবার অন্যের কাছে এ ঘাস বিক্রি করে টাকা আয় করে। মাঝে মধ্যে আমরা তাঁদের ঘাস চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রকৃতপক্ষে এ ঘাস একটি লাভজনক চাষাবাদ।
বিএননিউজ/নাবিদ, ওজি/ হাসনা
